প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যের প্রশাসন যে কতটা ব্যর্থ, এই রাজ্যের প্রশাসন যে কতটা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অপারগ, তা গতকাল যুবভারতীতে মেসিকে নিয়ে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, তার মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেখানে অনেক আশা করে হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা মেসিকে দেখতে পারেননি। উল্টে মেসিকে আগলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুবভারতীতে দর্শকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠান স্থলে আসার জন্য উদ্যোগী হলেও, শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে তিনিও গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যান। তবে যে কারণে বিশৃঙ্খলা হলো, সেই মন্ত্রীদের কেন গ্রেফতার করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। আর সেসবের মধ্যেই যখন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন চ্যানেলে গতকাল কলকাতার এই ঘটনা দেখানো হচ্ছে, অব্যবস্থার ঘটনা দেখানো হচ্ছে, তখন লজ্জায় পড়ে গিয়েছে বাংলা। আর ঘটনা ঘটার আগেই সুষ্ঠুভাবে গোটা ব্যবস্থা পালন করতে যখন গাফিলতি ছিলো, তখন এত পরে এইসব তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং সেই তদন্ত কমিটির পরিদর্শনে কি লাভ হবে, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

গতকাল যখন লণ্ডভণ্ড হয় যুবভারতী, তখন এই রাজ্যের অনেক বড় বড় মাথিরা আড়ালে ছিলেন। তারা খুব ভাল করেই জানতেন যে, যে অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে তারা যদি ময়দানে যেতেন, তাহলে জনতার ক্ষোভ আরও কতটা তীব্র হতো। পরবর্তীতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গোটা ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ঘটনা ঘটার পর দুঃখপ্রকাশ করে কি হবে? যারা অনেক কষ্ট করে হাজার হাজার টাকা দিয়ে নিজেদের স্বপ্নের নায়ককে দেখার জন্য টিকিট কেটে সেখানে গিয়েছিলেন, তারা তো তাদের আশা পূর্ণ করতে পারলেন না। ফলে তাদের টিকিটের টাকা কেন ফেরত দেওয়া হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। আর এসবের মধ্যেই গতকাল এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। অবশেষে সেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা আজ পৌঁছে গেলেন লন্ডভন্ড যুবভারতীতে।

সূত্রের খবর, এদিন লন্ডভন্ড যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে পৌঁছে যান গতকালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। যে তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়। পাশাপাশি সেই তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব। আজ মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব সেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন পরিদর্শন করেছেন। যে পরিস্থিতি গতকাল সেখানে হয়েছিল, যে অব্যবস্থার ছবি যেখানে সামনে এসেছিল, তা খতিয়ে দেখেন তারা। তবে এখানেই একাংশ প্রশ্ন তুলছেন যে, এই তৎপরতা কি আগে দেখানো যেত না? আগে যদি খুঁটিনাটি বিষয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিকমতো দেখা হতো, তাহলে তো গতকাল এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটিরও প্রয়োজন পড়তো না। কেন সুষ্ঠুভাবে একটা অনুষ্ঠান পরিচালনা৫ করা গেল না? যেটা হায়দ্রাবাদ পারলো, সেটা কেন পশ্চিমবঙ্গ পারল না? কেন এখানে মন্ত্রীরা মুখ দেখানোর জন্য মেসিকে আগলে ধরেছিলেন? কেন দর্শকদের হাত নাড়তে দেখা গেল না মেসিকে? কেন মন্ত্রীরা শুধুমাত্র মাইলেজ পাওয়ার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের মেসির আশেপাশে ছবি তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে দিলেন? এই প্রশ্নগুলো দর্শকদের মধ্যে থেকেই উঠতে শুরু করেছে। তাই ঘটনা ঘটার পর যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যেভাবে গতকাল আছড়ে পড়েছে জনতার ক্ষোভ যুবভারতীতে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এখন এই সমস্ত তদন্ত কমিটি এবং তার সদস্যদের এই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন পরিদর্শন আখেরে কতটা সুফল বয়ে আনবে, তা নিয়েও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে সকলের মধ্যে।