প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – এতদিন কথায় কথায় তৃণমূল নেতারা দাবি করতেন যে, এই রাজ্যে অনুপ্রবেশের পেছনে প্রধানভাবে দায়ী বিএসএফ। কারণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা বিএসএফ সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে। তারা সীমান্ত সামলাতে পারছে না, সেই কারণে রাজ্যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। তবে সম্প্রতি রাজ্যে এসে অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাজ্যের কাছে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য জমি চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার সেই জমি দিতে চায় না জন্যেই আজকে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। কারণ, রাজ্যের কাছে এই অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক প্রধান হাতিয়ার। তবে এবার সেই ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নবান্নর পক্ষ থেকে নেওয়া হলো, তাতে আরও দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এতদিন রাজ্যের ভুলের জন্যেই সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এই রাজ্যে ঢুকেছে। অর্থাৎ বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে অভিযোগ এই রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে করে আসছেন, সেটাই নবান্নের এক সিদ্ধান্তে সীলমোহর পড়ে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কি সেই সিদ্ধান্ত?
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা থাকলেও এবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর জন্য বিএসএফকে জমি দেওয়ার সম্পূর্ণ ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার। এক্ষেত্রে ৩৫৬ একর জমি তারা বিএসএফের হাতে দিতে চাইছে বলে খবর। ইতিমধ্যেই সেই ব্যাপারে সমস্ত জেলার জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্ন। আর রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের পরেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এতদিন কেন দেরি করা হলো? দিনের আলোর মত তো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাজ্য সরকার টালবাহানা করেছে জন্যেই এতদিন সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা যায়নি। যে সমস্ত তৃণমূল নেতারা এতদিন বিএসএফের ঘাড়ে দায় চাপাতেন, তারা এখন কি বলবেন?
বিজেপির দাবি, এই রাজ্যের শাসকদলের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী। কারণ তাদের ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়ে তৃণমূল বারবার করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছে। তবে এতদিন তৃণমূল নেতারা এমন সমস্ত ভাব দেখাচ্ছিলেন, যেন তারা সীমান্তের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত. কিন্তু তাদের সরকারের ঢিলেমির জন্যেই যে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি, তা তো নবান্নের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে গেল। ফলে তৃণমূল নেতারা এতদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, বিএসএফের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ তুলেছিলেন, তার জন্য তারা ক্ষমা চাইবেন তো? আসলে এখন কোনো উপায় না দেখে কেন্দ্রীয় সরকার ধরে ফেলেছে জন্যেই দেশের মানুষের কাছে মুখোশ খুলে যাওয়ার ভয়ে তৃণমূল সীমান্তে বিএসএফকে জমি দেওয়ার ব্যাপারে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে রাজ্যের মানুষ খুব ভালো করেই জানে, তৃণমূল মানেই দেশবিরোধী। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এদের জামানত জব্দ হয়ে যাবে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বারবার করে বাংলার সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিনিয়ত তৃণমূলের যারা মুখপাত্র আছেন, তারা দাবি করার চেষ্টা করেছেন যে, সীমান্ত সামলায় বিএসএফ, কেন্দ্রীয় সরকার, তারা ব্যর্থ, সেই কারণেই রাজ্যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। তবে বিজেপি অভিযোগ করেছিল রাজ্য সরকার জমি দিচ্ছে না জন্য কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এবার নবান্ন যে সিদ্ধান্ত নিলো, তাতে তো এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সরকারের বাধার জন্যই এতদিন সীমান্ত সুরক্ষিত ছিল না। এবার তারা জমি দিলো, এবার নিশ্চিত করেই সীমান্ত দিয়ে যাতে একটা পাখিও ঢুকতে না পারে, যেটা অমিত শাহ বলে গিয়েছিলেন, সেটা করে দেখিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে যে সিদ্ধান্ত এবার নবান্ন নিলো, যেভাবে তারা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য বিএসএফকে জমি দিলো, তাতে কিন্তু তৃণমূল যে চরম মিথ্যাচার করেছে এতদিন অনুপ্রবেশ নিয়ে, তা আরও একবার দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।