প্রিয়বন্ধু মিডিয়া – পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ভারতীয় সেনাকে ধন্যবাদ জানাতে আনা প্রস্তাবের উপর আলোচনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন বিজেপির অবস্থান জোরদার করার পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বক্তব্য শুরু করেন “বন্দে মাতরম” বলে এবং স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান এই প্রস্তাব আনার জন্য। শুভেন্দু বলেন, “যখন ভারত মাতা ক্ষতবিক্ষত, তখন আমাদের বীর সেনারা ১০০ কিমি ঢুকে জঙ্গিদের দমন করেছে। বিএসএফ থেকে শুরু করে প্যারা মিলিটারি – প্রত্যেককে কুর্নিশ জানাই।” তাঁর বক্তৃতায় বারবার উঠে আসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও ‘টার্গেট কিলিং’-এর কথা, যেগুলি প্রস্তাবে উল্লেখ না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শুভেন্দুর অভিযোগ, সেনাবাহিনীকে সম্মান জানানো হলেও, এই অপারেশনের নাম কেন বাদ গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। তিনি বলেন, “আপনার প্রস্তাবে সিঁদুর নামে আপত্তি কেন?” তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা প্রশ্ন তোলেন, “সিঁদুর কি সবাই পরে?” এর জবাবে শুভেন্দু বলেন, “হ্যাঁ, সিঁদুর পরে না মাকুরা, ওরা চিনকে সমর্থন করে।” এই মন্তব্য ঘিরে বিধানসভা উত্তাল হয়ে ওঠে। তৃণমূল-বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহ অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিম তখন নিজ দলের বিধায়কদের শান্ত হতে বলেন, কিন্তু শুভেন্দুর জবাব, “আপনারা বারণ করেন, আর গেটে গিয়ে ওরা বেলাইনে কথা বলেন।”
বক্তব্যে শুভেন্দু রাজ্যের শাসকদের ‘পাকিস্তানপন্থী’ বলেও কটাক্ষ করেন। বলেন, “আমাদের লড়াই সেইসব মানুষের বিরুদ্ধে যারা এখান থেকে পাকিস্তানের হয়ে কথা বলে বা জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থন করে।” তিনি উদয়ন গুহ, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও ফিরহাদ হাকিমের একাধিক মন্তব্য তুলে ধরে তাঁদের বক্তব্যের নিন্দা করেন। ফিরহাদের এক ব্যক্তিগত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে স্পিকারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয়। স্পিকার বলেন, “বাইরের কথা এখানে বলা যাবে না।” উত্তরে শুভেন্দু বলেন, “তাহলে ফিরহাদকেও বলতে দিন।” এরপর উদয়ন গুহর সঙ্গে সরাসরি বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিরোধী দলনেতা। বিজেপি বিধায়করা উদয়নকে ক্ষমা চাইতে বলেন, ফলে অধিবেশন কক্ষ তুমুল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
শেষে শুভেন্দু অধিকারী পাকিস্তানকে “আবর্জনা” বলে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন এবং বলেন, “ভারতমাতা কী জয়” ও “বন্দে মাতরম” দিয়ে বক্তব্য শেষ করছি।” যদিও স্পিকার তাঁর বক্তব্যের শেষে পরিষ্কার করে দেন, “আমাদের লক্ষ্য সেনাবাহিনীকে সম্মান জানানো, কোনও নাম দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে বিতর্ক নয়।” কিন্তু শুভেন্দুর আক্রমণাত্মক বক্তব্য, সিঁদুর প্রসঙ্গের উত্তাপ, এবং রাজ্য সরকারকে ঘিরে হিন্দু ভাবাবেগ ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে তাঁর মন্তব্য বিধানসভার আবহেই রাজনৈতিক লড়াইকে আরও তীব্র করে তোলে।