প্রিয় বন্ধু মিডিয়া – নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচন ঘিরে ফের প্রকাশ্যে এল তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোপন দ্বন্দ্ব। সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই বিধানসভা এলাকায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে আসুন—তা মোটেই চান না মহুয়া, যিনি ওই কেন্দ্রের সাংসদ এবং সংগঠনিক জেলার সভাপতিও। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের অভাবই এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিধানসভায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বিধায়কদের নিয়ে চলছিল আলোচনা। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কথাবার্তার মাঝে উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ ওঠে। কল্যাণ জানান, তিনি কালীগঞ্জে প্রচারে যেতে ইচ্ছুক, কিন্তু মহুয়ার আপত্তির জন্য যেতে পারছেন না। তাঁর এই মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর কানে যেতেই, তিনি নাকি আইপ্যাকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন ও পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন। এরপরই সিদ্ধান্ত হয়—কল্যাণের প্রচারে যাওয়ার আর প্রয়োজন নেই।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘদিনের অশান্তি। দলীয় সূত্র বলছে, লোকসভায় তৃণমূলের ডেপুটি লিডার পদে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়োগের পর থেকেই মহুয়ার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। মূলত সংসদে বক্তব্য রাখার সময়সীমা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। মহুয়া প্রশ্ন তোলেন, কেন তাঁকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। এরপর সাংবাদিক বৈঠকে নাম না করেই মহুয়াকে তীব্র আক্রমণ করেন কল্যাণ। সেই সংঘাতের রেশ এখনো টিকে আছে, যার পরিণতিতে কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে তাঁর প্রচার আটকে গেল।
দলের একাংশ মনে করছে, এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার প্রশ্নে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করছে। একজন প্রবীণ সাংসদের প্রচারে অংশ নেওয়ার ইচ্ছেও যখন অন্য সাংসদের আপত্তিতে থেমে যায়, তখন তা রাজনৈতিক ঐক্যের সংকেত দেয় না। মুখ্যমন্ত্রী যদিও বিষয়টিকে প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন, তবুও মহুয়ার ‘ভেটো’ মেনে নেওয়ার অর্থ, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্যেও এখন বড়সড় রদবদল ঘটেছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এই দ্বন্দ্বের রাজনৈতিক প্রভাব শুধু তৃণমূলের ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কালীগঞ্জে এই সংকেত বিরোধীদের হাতেও বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। দলীয় ঐক্য এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রশ্নে যেভাবে একাধিক বার মহুয়া বনাম কল্যাণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে, তা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে তৃণমূলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।