পুলওয়ামা হামলার বর্ষপূর্তির প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসায় বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনা হয়, আর তাতেই জোরদার রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ায় রাজ্যের শাসক-বিরোধী দুই শিবির। বিধানসভার অধিবেশনে সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “যারা এখানে থেকে পাকিস্তানের কথা বলে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। যারা আনাসুরুল্লা বাংলা-র মতো জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থন করে, তাদের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম।” এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয় প্রবল হইচই, তৃণমূলের পক্ষ থেকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিসও জমা দেওয়া হয় স্পিকারের কাছে।

বক্তব্যের শুরুতেই ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনির মাধ্যমে অধিবেশনে নিজের বক্তব্য শুরু করেন শুভেন্দু। সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য স্পিকারকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “ভারত মাতা যখন ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, তখন আমাদের বীর সেনারা ১০০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে মাসুদ আজহার বাদে সব জঙ্গিকে শেষ করে দিয়েছেন।” তিনি বিএসএফ, প্যারা-মিলিটারি এবং সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলেন, “স্পিকারের প্রস্তাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নাম নেই কেন? নামের মধ্যে সিঁদুর থাকলেই আপত্তি কেন?” এই প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, “সিঁদুর কি সবাই পরে?” জবাবে শুভেন্দু কটাক্ষ করে বলেন, “হ্যাঁ, মাকুরা পরে না। যারা চিনকে সমর্থন করে, তারা পরে না।”

বক্তব্য চলাকালীন একের পর এক শাসকদলের সদস্যরা বাধা দিতে শুরু করেন। শুভেন্দু পাল্টা বলেন, “আপনারা ভিতরে বারণ করেন, আর বাইরে গিয়ে বেলাইনে কথা বলেন। ফিরহাদ হাকিমের এক পোর্টালে দেওয়া বক্তব্য তো বললেন না!” তখন স্পিকার বলেন, “বাইরের মন্তব্য চলবে না। তাহলে ফিরহাদকেও বলতে দিতে হবে।” শুভেন্দু বলেন, “তাই দিন।” এরপর তিনি উদয়ন গুহ এবং নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মন্তব্যও উল্লেখ করেন। উদয়নের সঙ্গে তর্কাতর্কি চরমে পৌঁছায়, বিজেপি বিধায়করা তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। অধিবেশন কক্ষ চিৎকারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

১৮ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলেও, শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য ছিল বিস্ফোরক। পাকিস্তানকে “আবর্জনা” বলে কটাক্ষ করেন তিনি এবং দাবি জানান সেনাকে ধন্যবাদ জানানো প্রস্তাবে “অপারেশন সিঁদুর” ও “টার্গেট কিলিং”-এর উল্লেখ থাকুক। শেষ করেন “ভারতমাতা কী জয়” ও “বন্দে মাতরম” ধ্বনিতে। স্পিকার পরে বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধা জানানো, নাম নিয়ে বিতর্ক নয়।” কিন্তু শুভেন্দুকে চেপে ধরতে গিয়ে তৃণমূল যে এখন নিজেই ফিরহাদ ও উদয়নের বিতর্কিত বক্তব্যে জড়িয়ে পড়েছে, তাতে রাজ্য রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।