প্রিয়বন্ধু মিডিয়া – মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দাঙ্গা ও দুই হিন্দু নাগরিক—হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের—নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, “বহিরাগতরা স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে চক্রান্ত করে এই হিংসার সৃষ্টি করেছে।” তাঁর বক্তব্য ঘিরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়, এবং প্রশ্ন ওঠে—এই হামলার মূল উদ্দেশ্য কী? তবে এখন মুখ্যমন্ত্রীর সেই তত্ত্বকেই একপ্রকার খারিজ করে দিল রাজ্য পুলিশের চার্জশিট, যা শাসক দলের জন্য এক বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, এই দাঙ্গায় জড়িত ১৩ জন অভিযুক্তের প্রত্যেকের বাড়ি সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার মধ্যেই। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে দিলদার নাদাব, আসমাউল নাদাব, ইনজামুল হক, জিয়াউল হক, ফকরুল হক, আজফারুল শেখ, মনিরুল শেখ, একবাল শেখ, নুরুল ইসলাম, সাবা করিম, হজরত শেখ, আকবর আলি এবং ইউসুফ শেখ। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী যাদের ‘বহিরাগত’ বলে দাগিয়েছিলেন, পুলিশি তদন্ত বলছে তারা প্রত্যেকেই স্থানীয়। পুলিশ নিজেই এই চার্জশিটে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কোনো বাইরের শক্তি নেই।
এই তথ্য সামনে আসতেই বিরোধীরা তৃণমূল সরকারের অবস্থানকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “প্রমাণ হয়ে গেল—তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের মন ঘোরানোর জন্য মিথ্যা প্রচার করেছিলেন। জঙ্গি বা মৌলবাদী শক্তিকে আড়াল করতেই তিনি ‘বহিরাগত’ নাটক করলেন।” এমনকি বিজেপির দাবি, এই দাঙ্গা পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের উপর আক্রমণ ছিল, কিন্তু তৃণমূল সরকার ধর্মীয় ভারসাম্য রক্ষা ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে ঘটনাকে অন্যদিকে ঘোরাতে চেয়েছে।
অন্যদিকে, তৃণমূলের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়েছে যে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। শাসক দলের মুখপাত্রদের যুক্তি, “বহিরাগত” মানে সবসময় অন্য রাজ্যের লোক নয়, এটি রাজনৈতিক অপশক্তিকেও নির্দেশ করতে পারে যারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। যদিও পুলিশের চার্জশিটে এই ব্যাখ্যার কোনও ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা, মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে—তদন্ত যদি সত্যিই স্বচ্ছ হয়, তাহলে প্রশাসনের উচ্চস্তরে এত বড় তথ্যবিভ্রাট কীভাবে সম্ভব? মুর্শিদাবাদের এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে নতুন করে ধর্মীয় ও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব এখন অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, এবং বিজেপি এই পরিস্থিতিকে ভোটের ময়দানে কাজে লাগাতে মরিয়া।