নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকানা এখনও জেল। বিগত প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন তিনি। যদিও এই সময়কালে একাধিকবার জামিনের আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তা খারিজ হয়ে গেছে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, কুন্তল ঘোষ প্রমুখ অভিযুক্তরা জামিন পেলেও পার্থের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। বুধবার ফের একবার কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে সংস্থাটি জানিয়েছে, কেন এই প্রাক্তন মন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া অনুচিত।

সিবিআইয়ের বক্তব্যে বলা হয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের মূল চক্রে থাকা ব্যক্তিদের একজন হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তদন্তের স্বার্থে এবং মামলার প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কায় তাঁকে জামিন দেওয়া যাবে না। এমনকি তাঁর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য এখন রাজসাক্ষী হয়েছেন, যিনি কয়েক কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের হিসেব আদালতে দিয়েছেন বলে সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে। এর ফলে পার্থর ওপর চাপ আরও বেড়েছে। পার্থর আইনজীবী অবশ্য পাল্টা সওয়াল করার জন্য আদালতের কাছে সময় চান এবং বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২ জুলাই।

একসময় রাজ্য রাজনীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ক্ষমতার অন্যতম মুখ। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কিন্তু ২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই থেকেই জেল হেফাজতে দিন কাটছে তাঁর। তদন্ত চলাকালীন, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল নগদ অর্থ এবং সোনা এই মামলায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তৈরি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং রাজনীতিতে নেমে আসে ধাক্কা।

সিবিআই এবং ইডির একাধিক চার্জশিটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম মূল অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির মূল সিদ্ধান্ত এবং আর্থিক লেনদেনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। এমনকি জামিন পেলে প্রমাণ নষ্ট করার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আদালতে সওয়াল করেছে সিবিআই। তৃণমূলের পক্ষ থেকে যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি, তবে রাজনীতির ময়দানে এটা পরিষ্কার যে, দলের প্রাক্তন হেভিওয়েট নেতার আইনগত লড়াই অনেকটাই একক হয়ে পড়েছে।

সবমিলিয়ে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি ও প্রশাসনিক মহলে ফের নতুন করে আলোড়ন দেখা দিয়েছে। এখন দেখার, আগামী ২ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় আদালত এবং তাঁর আইনজীবীরা কী যুক্তি তুলে ধরেন।