প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
কসবা গণধর্ষণ কান্ডের পর বিরোধীরা বারবার করে অভিযোগ করেছে যে, এরকম মনোজিৎ মিশ্ররা রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে কলেজে লুকিয়ে আছেন, যারা মহিলাদের হেনস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অধ্যাপকদের হেনস্থা করতেও দুবার ভাবে না। তাদের কথার বাইরে কেউ গেলেই প্রত্যেকটি কলেজে তৃণমূল নেতাদের দাদাগিরি শুরু হয়ে যায়। আর এবার বিরোধীদের সেই অভিযোগকে সত্যি করেই যে ঘটনার সাক্ষী থাকলেন চাপড়া জেনারেল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ, তাতে তিনি চোখের জল ফেলতে ফেলতে এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আর এই কলেজে তিনি থাকবেন না। আর যদি তাকে এই কলেজ থেকে বদলি না করা হয়, তাহলে তিনি ক্ষোভে, অপমানে এবার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত নিতেও দুবার ভাববেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কি এমন হলো, চাপড়া কলেজের অধ্যক্ষের?
জানা গিয়েছে, রাজ্য সড়কের পাশে একটি নয়নজলি ছিল। আর সেটা ভরাট করে দোকান তৈরি হতেই তার প্রতিবাদ করেন চাপড়া জেনারেল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস পান্ডে। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়ে তিনি সেখানে একটি বোর্ড লাগিয়ে দেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বোর্ডগুলো ভেঙে ফেলা হয় বলে খবর আসে। যার ফলে সেখানে গেলে তৃণমূলের অজয় ঘোষ সহ তার অনুগামীরা মিলে সেই অধ্যক্ষ শুভাশিস পান্ডেকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। আর এই ঘটনার পরেই একজন কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে শুধুমাত্র পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে গিয়ে তা তৃণমূল কর্মীর পছন্দ হয়নি জন্য যেভাবে তিনি একজন তৃণমূলের কর্মীর কাছে মার খেলেন, তাতে এই অপমান আর মেনে নিতে পারছেন না অধ্যক্ষ শুভাশিস পান্ডে। তাই এবার চোখের জল ফেলতে ফেলতে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন অধ্যক্ষ শুভাশিস পান্ডে। তিনি বলেন, “যেভাবে মারধর করা হয়েছে, তাতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ডিপার্টমেন্টকে বলব, আমাকে অন্য কোথাও বদলি করা হোক, না হলে চাকরিটাই ছেড়ে দেবে। এই কলেজে আমি আর কাজ করতে পারব না।” কিন্তু এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও একজন অধ্যক্ষের গায়ে হাত তোলার পরেও কোনোই অনুশোচনা নেই সেই তৃণমূল কর্মী অজয় ঘোষের। উল্টে তিনি বলেন, “তখন আমার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। এমন মানসিক অবস্থায় ছিলাম যে, সেখানে আমার বাবা থাকলে তাকেও মারতাম।”
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্যে এ কোন সংস্কৃতি তৈরি করছে তৃণমূল কংগ্রেস? বিরোধীদের বক্তব্য, এভাবেই শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তৃণমূলের নেতারা। যেভাবে একজন অধ্যক্ষকে শুধুমাত্র পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেওয়ার জন্য মার খেতে হলো, তাতে এই লজ্জা রাখার মত জায়গা নেই। অধ্যক্ষকে যেভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে, তাতে তো অবিলম্বে সেই তৃণমূল কর্মীর উচিত, প্রকাশ্যে সেই অধ্যক্ষের পা ধরে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু দল কেন এখনও তাকে শাস্তি দিচ্ছে না? কেন এখনও পর্যন্ত নিলিপ্ত রয়েছে এই রাজ্যের শাসক দলের নেতারা? আর কেনই বা একজন অধ্যক্ষের নিরাপত্তা হীনতার পর শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কড়া পদক্ষেপ? প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।