প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- যে বীরভূম জেলা নিয়ে কোনো সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিন্তা করতে হয়নি, গোটা রাজ্যের মধ্যে সবথেকে বেশি যে জেলায় তৃণমূলের জনপ্রিয়তা, সেটা ভয়ে হোক বা ভক্তিতে, সেই বীরভূমই কিন্তু এখন তৃণমূলের গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে। একদিকে অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিও ক্লিপ তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ। অন্যদিকে তলায় তলায় বীরভূম জেলা তৃণমূলে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আর সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন একটা আকার নিয়েছে যে, যার হাতেই বীরভূমের দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, অপর প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে যাবে ভাঙ্গনের খেলা। অন্তত তেমনটাই দাবি বিজেপির। আর সেই খেলায় আগামী নির্বাচনে এই বীরভূম, যা একসময় শাসকের শক্ত ঘাঁটি ছিল, সেখানে চূড়ান্ত অ্যাডভান্টেজ পাবে ভারতীয় জনতা পার্টি। তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কেন এমন সমীকরণের কথা বলা হচ্ছে? বীরভূমে তো এখনও তৃণমূল নেতারা নিজেদের মত করে কোর কমিটির মধ্যে দিয়ে লড়াই করছেন, বিজেপিকে কোনোমতেই এখানে মাথা তুলতে দেবেন না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন! সেখানে হঠাৎ এইরকম সমীকরণ আসছে কেন?
বলা বাহুল্য, দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে তিনি যখন জেলে ছিলেন, তখন বীরভূম জেলা রাজনীতিতে ক্রমশ উত্থান ঘটেছিল কাজল শেখের। যিনি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলেই পরিচিত। অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে তিনি বীরভূম জেলায় নিজের মত করে দায়িত্ব সামাল দিয়েছেন, সবাইকে একত্রিত করেছেন, তৃণমূলের পক্ষে থাকার বার্তা দিয়েছেন। ফলে জেল থেকে ফিরে আসার পর অনুব্রত মণ্ডল নিজের হাতে দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করলেও, কাজল শেখ কিন্তু পাল্টা লড়াই দিচ্ছেন। যার ফলে বিরোধীরা বলছেন যে, পরিস্থিতি যাতে কোনোমতেই আয়ত্তের বাইরে বেরিয়ে না যায়, তার জন্য কাউকে সভাপতি না করে একটা ৯ সদস্যের কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এতসবের পরেও কি লাভ হবে? যৌথ নেতৃত্ব কি মানবেন এখানকার তৃণমূল নেতারা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে অনুব্রত মণ্ডল এখন অত্যন্ত চাপে রয়েছেন। কারণ একদিকে কাজল শেখের উত্থান এবং অন্যদিকে তার অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তিনি অস্বস্তিতে। আর এই সুযোগে কাজল শেখ নিজের মত করে সংগঠন গোটাতে শুরু করেছেন। ফলে সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই তার আগে যদি কাজল শেখের ওপর বেশি ভরসা করে তৃণমূল, তাহলে অনুব্রত মণ্ডল তলায় তলায় নিজের অনুগামী বলে যারা পরিচিত, এতদিন যেভাবে তিনি সংগঠন সামাল দিয়ে এসেছেন, তাতে বীরভূম জেলায় তার একটা ব্যাপক অনুগামী রয়েছে, তাদের দিয়ে তিনি অন্য খেলা খেলিয়ে দিতে পারেন। যার ফলে অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যেতে পেরে বিজেপি। অন্যদিকে এত কিছুর পরেও যদি অনুব্রত মণ্ডলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তো এমনিতেই তৃণমূলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়বে। তার মধ্যে কাজল শেখও তার অনুগামীদের নিয়ে তলায় তলায় বড় অন্তর্ঘার সৃষ্টি করতে পারেন বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই সমস্ত সমীকরণকে সামনে রেখেই বিরোধীরা বলছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেস বীরভূম জেলায় যে ফর্মুলাই এখন প্রয়োগ করুন না কেন, সব কটাতেই তার প্ল্যান ফেল হতে বাধ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বীরভূম জেলায় এখন বিজেপিকে কিছু করতে হবে না। তৃণমূল যে সিদ্ধান্তই নেবে, সেটাই তাদের জন্য হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাই বিজেপিকে এখন চুপচাপ নীরবতা পালন করতে হবে এবং গোটা ঘটনা প্রক্রিয়ার দিকে সুতীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। যাকেই তৃণমূল দায়িত্ব দেবে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য, তার বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা যেই হোক না কেন, তিনি পাল্টা তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা সেই নেতাকে চাপে রাখতে তলায় তলায় বড় কোনো গেম খেলে দিতে পারেন। আর এটাই যদি ঠিকমত ধরে ফেলে বিজেপি, তাহলে দিনের শেষে তারাই বীরভূমে বাজিমাত করতে বাধ্য। তাই একসময় বীরভূম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত বিশ্বাস এবং ভরসার জায়গা হলেও, এখন সেই বীরভূম জেলাই কার্যত তার কাছে খাদের কিনারার সমান বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।