প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য সামনে এসেছে। বিভিন্ন নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে হেভিওয়েটদের বিভিন্ন মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টিও করেছে গোটা দেশজুড়ে। আর এবার সেই স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়েই বড় মন্তব্য করে বসলেন এমন এক ব্যক্তি, যে তার মন্তব্যের পরেই আলোড়ন পড়তে বাধ্য। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। যে আরএসএসের দেশপ্রেম থেকে শুরু করে মানব জীবনের প্রতি অবদান অনস্বীকার্য। আর সেই আরএসএস প্রধানই দেশের স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে এবার বড় মন্তব্য করে বসলেন। কিন্তু কি বললেন তিনি?

জানা গিয়েছে, এদিন নাগপুরে একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে যোগ দেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। আর সেখানেই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। মোহন ভাগবত বলেন, “১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর দেশজুড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুন জ্বলে উঠেছিল। কার প্রচেষ্টায় দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা নিয়ে সর্বদা বিতর্ক থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই স্বাধীনতা কেবল একজন ব্যক্তির কারণে আসেনি। এর জন্য প্রচেষ্টা ১৮৫৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং সর্বত্র আগুন জ্বলে উঠেছিল‌। এরপর আগুন কখনও নিভে যায়নি। প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।” পাশাপাশি তিনি এই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের যে সাফল্য এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার যে বিষয়, সেক্ষেত্রে কোনো একক ব্যক্তি এর কৃতিত্ব নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে আরএসএসের মত স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, স্বেচ্ছাসেবকদের মানুষের মধ্যেই থাকতে হয়, নিঃস্বার্থভাবে সেবা করতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে আরএসএস প্রধানের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন সময় দেশের শাসক থেকে শুরু করে বিরোধী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা সংগ্রামে কাদের বেশি ভূমিকা ছিল, কারা বেশি পরিশ্রম দিয়েছেন, তা নিয়ে তরজায় জড়িয়ে পড়েছেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে লাগাতার বলা হয় যে, তারাই নাকি স্বাধীনতার সংগ্রামে সবথেকে বেশি পরিশ্রম দিয়েছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তারাই নাকি লড়াই করেছেন! কিন্তু কেউ এককভাবে যে এই স্বাধীনতার সংগ্রামের কৃতিত্ব নিতে পারে না, তা মোহন ভাগবতের মত ব্যক্তিত্বের মন্তব্যের পর যেভাবে স্পষ্ট হয়ে গেল, তাতে দেশবাসীই যে এই লড়াইটা লড়েছে, সেই কথা কেন কেউ বলে না, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে?

পর্যবেক্ষকদের মতে, কাউকে না কাউকে কোনো না কোনো বিষয় শুরু করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হয়তো লড়াই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল গোটা দেশের মানুষ। সকলেই স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই আন্দোলন করেছিলেন। অনেকের নাম সামনে এসেছে, আবার অনেকের নাম সামনে আসেনি। কিন্তু, তাই বলে বিভিন্ন সময় যে বা যারা কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন, পূর্বসূরিদের কথা তুলে ধরে ঘুরিয়ে তাদেরকেই কি এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বার্তা দিতে চাইলেন মোহন ভাগবত? এককভাবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে আন্দোলন, তার কৃতিত্ব যে কেউ নিতে পারে না, সেকথাই কি বুঝিয়ে দিয়ে যারা সব সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে নিজেদের দিকে ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাদেরকেই কি কিছুটা খোঁচা দিলেন? আরএসএস প্রধানের মন্তব্যের পর এই সমস্ত প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।