২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে রাজ্য রাজনীতিতে। সাম্প্রতিক মহেশতলা ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না—লিখে রাখুন!” মঙ্গলবার দুপুরে মহেশতলার রবীন্দ্রনগরে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে একাধিক পুলিশকর্মী আহত হন এবং ১২টি পুলিশ গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। শুভেন্দুর দাবি, এই ঘটনা রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং ‘জেহাদিদের প্রশ্রয়’—এই দুইয়ের ফল। পরিস্থিতি সামাল দিতে আধাসেনা মোতায়েনেরও দাবি জানান তিনি।
শুভেন্দু অধিকারী এদিন ভবানী ভবনে রাজ্যের ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে দেখা হয়নি, সেই নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমার পুলিশ ভাইরা মার খাচ্ছেন, অথচ ডিজি দেখা করছেন না!” তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে এখন ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ চলছে, যেখানে পুলিশ নির্লিপ্ত থাকে এবং দুষ্কৃতীরা নির্বিঘ্নে হিংসা চালায়। শুভেন্দুর মতে, সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং যদি পুলিশ পেরে না ওঠে, তবে প্যারামিলিটারি বাহিনী মোতায়েন করা হোক। পাশাপাশি তিনি জানান, আগামীকাল বিধানসভা উত্তাল হবে এবং মহেশতলার ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিজেপির কর্মসূচি চলবে।
এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, “মহেশতলায় কোনও একটি আপত্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে পুলিশ, পাড়া-প্রতিবেশীরা মিলে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এমন সংঘাত রাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে।” তৃণমূল দাবি করছে, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের ঘটনা বড় করে তুলে রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটাতে চাইছে। তবে শুভেন্দু এবং বিজেপির বক্তব্য, এই পরিস্থিতি নতুন নয়—এটি পূর্ববর্তী মোথাবাড়ি ও সামশেরগঞ্জের ঘটনাগুলোরই পুনরাবৃত্তি। তখনও হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি, এবং এবারও সেই ইস্যু সামনে এনে তৃণমূল সরকারের ‘ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ’ উন্মোচনের চেষ্টা করছে।
এতসবের মধ্যেই স্পষ্ট হচ্ছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি হচ্ছে, তা আরও তীব্র হবে। শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণ, মমতার বিরুদ্ধে তাঁর আগ্রাসী অবস্থান এবং আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে সোজাসাপ্টা বক্তব্য, এই সব কিছুই বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের অংশ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, তৃণমূল সরকারও নিজেদের প্রশাসনিক সাফল্য তুলে ধরে পাল্টা ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তবে মহেশতলার মতো ঘটনা ভোটের আগে বারবার ঘটলে তা যে রাজ্য রাজনীতিকে আরও উত্তাল করে তুলবে, তা বলাই বাহুল্য।