প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আর খুব একটা বেশি দেরি নেই। আর তার আগে থেকেই বিরোধীরা সব থেকে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছে, তা হলো, নির্বাচনে স্বচ্ছতা। ইতিমধ্যেই বুথ লেভেল অফিসার পদে কোনো কন্ট্রাকচুয়াল ব্যক্তিকে রাখা যাবে না বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। আর তারপরেই এবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সেই বুথ লেভেল অফিসার পদে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই নানা মহলে তৈরি হয়েছে গুঞ্জন।

ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে জানানো হয়েছে যে, বুথ লেভেল অফিসার পদে যে সমস্ত পূর্ণ সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়িত্ব পাবেন, তাদের সরকারি বেতন ভুক্ত এবং ডিএ প্রাপক হতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থাৎ যাতে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সংস্রবের মধ্যে না থাকে এবং কোনো রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত না হন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেই তাদের বিএলও পদে দায়িত্ব দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ একেবারেই নিরপেক্ষ শিক্ষক, শিক্ষিকাদের এই দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কমিশন। তবে এখানেই অনেকের প্রশ্ন যে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, এরকম শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তো একেবারে হাতেগোনা হবে! সেক্ষেত্রে বিএলও পদে রাজনৈতিক পরিচয়হীন শিক্ষক, শিক্ষিকা এত মাত্রায় কিভাবে পাবে নির্বাচন কমিশন? একাংশ বলছেন, কমিশন চেষ্টা করছে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে বারবার করে এই বিএলও পদে পার্মানেন্ট সরকারি কর্মচারীদের বসানোর কথা বলা হয়েছে। আর সেই মতই কমিশনের পক্ষ থেকে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, যাদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই, তাদেরকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তবে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের ওপর এত চাপ খুব একটা ভালো চোখে নিতে পারছে না শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ। এদিন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “ভোটার লিস্ট সংশোধন, ভোটার কার্ড তৈরি সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে বুথ লেভেল অফিসারদের ওপর। এবারে সেই দায়িত্ব শুধু শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমনিতেই স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাবে পঠন পাঠন ব্যাহত হচ্ছে। একটার পর একটা শিক্ষা বহির্ভূত কাজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকতার কাজকে ক্রমাগত গৌণ করে তোলা হচ্ছে। আমরা এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “সারা বছর কাজ করিয়ে প্রায় তিন হাজার টাকা দিয়ে এই কাজ করানো মধ্যযুগীয় শোষনের নামান্তর। নির্বাচন কমিশনে আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সেই ব্যাপারে কমিশনের কোনো হুশ নেই।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই বিএলও পদে নিয়োগ করার জন্য কমিশনের যে চিন্তা ভাবনা, তা করতে গিয়ে হয়ত তাদের প্রথমে হোঁচট খেতে হতে পারে। কারণ রাজনৈতিক পরিচয়হীন শিক্ষক, শিক্ষিকার অভাব রয়েছে যথেষ্ট ভাবেই। কেউ না কেউ কোনো না কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে এক্ষেত্রে কমিশন কতটা সঠিক ব্যক্তিদের বিএলও পদে বসাতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তবে কমিশনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনার জন্য বুথ লেভেল অফিসার পদে তারা যেভাবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের চাইছে, তাতেই স্পষ্ট যে, এবার নির্বাচন কমিশন বাংলা নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস। বিরোধীদের পক্ষ থেকে যে কথাটা বারবার করে বলা হচ্ছিল যে, বাংলায় নির্বাচন হলেই সন্ত্রাস হয়, তা বন্ধ করার জন্য কমিশন নির্বাচনের আগেই বিএলও পদে বসানো নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো, তাতে নির্বাচন শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত যদি একাধিক এইরকমই বড় বড় সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে গ্রহণ করে কমিশন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সরকারের কিন্তু বারোটা বাজতে চলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।