প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
সামনেই রথযাত্রা। প্রচুর মানুষ রথযাত্রায় পুরীর জগন্নাথ দেবের দর্শনের জন্য যান। কিন্তু কিছুদিন আগেই বাংলায় দীঘাতে হয়ে গিয়েছে জগন্নাথ মন্দির। ঘটা করে এবার সেখানেও রথযাত্রা উৎসব পালন করা হবে। তাই এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের যারা নেতারা রয়েছেন, তারা মনে মনে পুরী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলেও দলের অলিখিত নির্দেশের কারণেই কি এবার তাদের রথযাত্রা কাটাতে হবে দীঘাতে? ইতিমধ্যেই সেই ব্যাপারে তৃণমূলের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে গুঞ্জন। ভগবানের দর্শন নিয়েও যেভাবে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে, যেভাবে পুরীর সঙ্গে দীঘার একটা দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, তাতে তৃণমূলের মধ্যেই এই অলিখিত নির্দেশ নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি অলিখিত নির্দেশ দলের সমস্ত স্তরের নেতাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। যেখানে জানানো হয়েছে, গোটা বাংলার নজর যাতে এবার দীঘায় রথযাত্রার দিকে থাকে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, এবারের রথযাত্রায় পুরীতে নয়, নেতাদের দীঘার জগন্নাথ মন্দিরেই যেতে হবে বলেও দলের পক্ষ থেকে একটি অলিখিত নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর সেই নির্দেশ ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনেকে বলছেন, কে কোথায় কোন ধর্ম দর্শনে যাবে, এটাও কি দল ঠিক করে দিতে পারে? শুধুমাত্র প্রচার পাওয়ার জন্যই কি পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ দেবের দর্শনে যাতে নেতারা না যান, তার জন্য এইভাবে কড়া নির্দেশ দিয়ে দলীয় নেতাদের দীঘার মন্দিরেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে তৃণমূল?
এদিন এই ব্যাপারে কলকাতার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, “এবারে জগন্নাথ দেবের মন্দির আমাদের রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পুজো করবার দায়িত্ব আমাদের সকলের। প্রভু যখন স্বয়ং আমাদের এখানে এসেছেন, এখানেই দর্শন হবে।” অন্যদিকে কাশিপুর বেলগাছিয়ার তৃণমূল বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেন, “ঈশ্বর সর্বত্র বাস করে। আমিও অনেকবার পুরী যাইনি। আমার বাড়িতেই জগন্নাথ দেব রয়েছে। আমি বাড়িতেই উল্টোরথ পালন করেছি। মনে ভক্তি থাকলে সেখানে গিয়ে ঈশ্বর সাধনা করা যেতে পারে। উল্টো রথে এবার হয়ত দীঘায় যেতে পারি।” তবে গোটা বিষয়ে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপিও। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “তৃণমূল দলে ওনার কথা তো ফেলবার নয়। দেখানোর জন্য একটা কথা বলেন। তবে ওনার দলেও ওনার নির্দেশ মানা হয় না। সেটাও তো আমরা দেখতে পাই।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, এইভাবে অলিখিত নির্দেশ দিয়ে কে কোন মন্দিরে যাবে, তাকে আটকাতে পারে তৃণমূল? পুরীর জগন্নাথ দেবের দর্শন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সেখানে যদি তৃণমূলের কোনো নেতারা যায়, সেক্ষেত্রে রথযাত্রার আগেই কেন তাদের অলিখিত নির্দেশ দিয়ে শুধুমাত্র দীঘাতেই থাকার কথা বলা হবে? যদি সেখানে ভগবান থাকেন, তাহলে নিশ্চিত করেই দীঘাতে ভিড় হবে। কিন্তু সেটার জন্য কাউকে জোর করা কি ঠিক? যেভাবে দলের পক্ষ থেকে অলিখিত নির্দেশ দিয়ে সব থেকে বেশি প্রচার যাতে দীঘার মন্দিরে হয়, তার জন্য নেতাদের বলা হচ্ছে, এতে কি ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়া সম্ভব? তাই দলের এই অলিখিত নির্দেশ ঘিরে তৃণমূলের মধ্যেই ক্রমাগত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।