প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – এই রাজ্যে বারবার করে বিরোধীরা অভিযোগ করছে যে, অনুপ্রবেশ এবং রোহিঙ্গাদের বাংলার ভোটার তালিকায় যাতে নাম ওঠানো যায়, তার জন্য মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ তাদের কাছে এরাই সবথেকে বড় সম্পদ। এক্ষেত্রে বিরোধীদের অভিযোগ সত্যি করে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে, ওপার বাংলার অনেকের ভোটার তালিকায় এপার বাংলায় নাম রয়েছে। যার ফলে একটা বড় গড়মিল রয়েছে, এটা স্পষ্ট। আর সেসবের মধ্যেই এবার যে ব্যক্তির নাম পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় পাওয়া গেল এবং যেভাবে তার সঙ্গে শাসক দলের ঘনিষ্ঠতার খবর সামনে আসছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে যে, এরাই কি তাহলে তৃণমূলের আসল ভোটব্যাংক? কি ঘটনা ঘটেছে? কেন এমনটা বলা হচ্ছে?

জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, যেভাবে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একটা অংশের মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন, তার মধ্যে ছিলেন নিউটন দাস নামে এক ব্যক্তি। আশ্চর্যজনকভাবে নিউটন দাসের নাম রয়েছে এপার বাংলার ভোটার তালিকায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, তিনি তো বাংলাদেশের বাসিন্দা। বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের মত মিছিলে তাকে দেখা গিয়েছে। এমনকি লাঠি হাতে তিনি সেই মিছিলে রয়েছেন, এমন ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাহলে তার নাম বাংলার ভোটার তালিকায় এলো কি করে? কারা তার নাম তুলে দিল?

যতদূর খবর পাওয়া যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রথমে এসেছিলেন এই নিউটন দাসের দাদা তপন দাস। পরবর্তীতে সেই পথ অনুসরণ করে নিউটন দাস পশ্চিমবঙ্গে এসে সেখানকার ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। আর পরিস্থিতি যদি এখানেই থেমে যেত, তাহলে না হয় হত। কিন্তু তৃণমূলের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও অস্বস্তির হয়ে গিয়েছে, যখন দেখা যাচ্ছে, সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি দেবাশিষ দাসের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতে রয়েছেন এই নিউটন দাস। আর এখানেই বিরোধীরা বলছেন, শাসক দলের আশ্রয়েই এই সমস্ত বাংলাদেশিরা রাজ্যে ঢুকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ করছে। এর পেছনে তৃণমূলের অবদান রয়েছে। তারাই এদের বাংলায় ঢুকিয়ে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধি করার কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানে থেকে কি করে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার হয়ে গেল নিউটন দাস? এদিন সেই ব্যাপারে তার দাদা তপন দাস বলেন, “চার বছর হলো যোগাযোগ নেই। ও এখানে থাকে না। বাংলায় পড়াশোনা করতে এসেছিল। তারপর আবার বাংলাদেশে চলে যায়। ও বাংলাদেশের ভোটার। কিন্তু এখানে কে কিভাবে ওকে ভোটার করা হয়েছে, তা আমি জানি না। অনেক বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে চলাফেরা করত।”

পর্যবেক্ষকদের মতে, তাহলে তো বিরোধীরা এতদিন যে দাবি করেছে, সেটা সত্যি! আজকে তো জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, পশ্চিমবঙ্গে কারা বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের ভোটার তালিকায় নাম তুলে দিচ্ছে। যেভাবে এই নিউটন দাস বাংলাদেশের একটি লড়াইয়ে অংশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের এক দাপুটে নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তাতে তো এই ধারণাই বদ্ধমূল হবে যে, এরা তৃণমূলের আশ্রয়েই বাংলায় রয়েছে। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই রাজ্যের শাসকদলের যারা মুখপাত্র আছেন, যারা বারবার করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় ষড়যন্ত্র করে লোক ঢোকানোর অভিযোগ তুলছেন, তারা কি বলবেন? আর সব থেকে বড় কথা, ভোটটাই তো বাংলার ক্ষেত্রে বড় কথা নয়। বাংলার মানচিত্রে যে বড় বদল আসছে, এই সমস্ত ভোটের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় লোকজন ঢোকানোর ক্ষেত্রে, এটা কি তৃণমূলের নেতারা নিজেদের রাজ্যের সুরক্ষার জন্য একবারও মাথায় নিতে পারছেন না? একবারও ভাবতে পারছেন না যে, তাদের এই বাংলা বিপদের মুখে পড়বে? নাকি নির্বাচন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকাই সব থেকে বড় লক্ষ্য শাসকের কাছে? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।