প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – কথায় আছে, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। সেটাই হয়ত এখন হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে। আইসিকে কদর্য ভাষায় হুমকি এবং গালিগালাজের যে অডিও ক্লিপ, তা ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছে তার অনুগামীদের। আর এসবের মধ্যেই এবার সেই অনুব্রত মণ্ডলের আরও একটি কীর্তি ফাস হয়ে গেল। যা দেখে বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, হাতি কাদায় পড়লে মশাও লাথি মারে। অডিও ক্লিপ নিয়ে এমনিতেই তো অস্বস্তিতে অনুব্রত মণ্ডল। তার মধ্যে এবার তার সম্পর্কে যে বিস্ফোরক এবং ভয়ংকর অভিযোগ করলেন বিশ্বভারতীর এক সময়কার উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, তাতে সেই অনুব্রত মণ্ডল আরও বড় সমস্যার মুখে পড়ে গেলেন বলেই মনে করছেন একাংশ।
বলা বাহুল্য, এই বিশ্বভারতীর উপাচার্য থাকার সময় বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। পরোক্ষে তিনি বারবার করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এই অনুব্রত মণ্ডল এবং তার অনুগামীরা কিভাবে তার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছেন। উল্টে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সেই বিদ্যুৎবাবুকে নানাভাবে আক্রমণ করে এটা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছিল যে, তিনি নাকি বিজেপির লোক। তবে তিনি উপাচার্য থাকার সময় তার নিরপেক্ষ কাজে যেভাবে অনুব্রত মণ্ডল প্রতিমুহূর্তে বাধা দিয়েছেন, এবার অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর সেই অনুব্রত মণ্ডলের আর এক কীর্তি ফাস করে দিলেন বিশ্বভারতী প্রাক্তন উপাচার্য। বুঝিয়ে দিলেন, যেভাবে তাকে ২১ দিন বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তার পেছনে ছিলেন এই অনুব্রত মণ্ডল এবং তার অনুগামীরাই।
ইতিমধ্যেই এক সংবাদ ষমাধ্যমকে উপাচার্য থাকাসময় নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আমার অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়। কারণ অনুব্রত মণ্ডল এই ধরনের মানুষ, তিনি যে সবার সঙ্গে কদর্য ব্যবহার করবেন, এটা খুব সহজেই অনুমেয়। বহুবার আমি গালিগালাজের সম্মুখীন হয়েছি। ফোনে বহুবার আমাকে গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া হয়েছে এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার ধমকিও দেওয়া হয়েছে।” এক্ষেত্রে বিশ্বভারতী মেলা প্রাঙ্গণে যে হেরিটেজ গেট ছিল, সেই গেট জেসিবি মেশিন দিয়ে ভাঙার আগে অনুব্রত মণ্ডল তাকে হুমকি দিয়েছিলেন এবং প্রচুর লোক এসে সেখানে তান্ডব চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। আর এতসব ঘটনা ঘটার পরেও, পুলিশ যেভাবে সেই সময় নিষ্ক্রিয় ছিল, তা নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য।
তবে অনুব্রত মণ্ডলের কীর্তি এখানেই শেষ নয়। অফলাইন না অনলাইন, কিভাবে পরীক্ষা হবে, তা নিয়েও অনুব্রতবাবুর সঙ্গে দড়ি টানাটানি চলেছিল বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। যার ফলে সেই অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশেই তাকে ২১ দিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ বিদ্যুৎবাবুর। এক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরা যেভাবে তার আবাসনে হামলা করেছিল, তাতে সেদিন তার প্রাণহারানীর মতো ঘটনা ঘটতে পারত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধান করা না থাকলে তিনি বেঁচে থাকতেন না বলেও জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য। আর এখানেই প্রশ্ন যে, অনুব্রত মণ্ডলের তান্ডব তো সকলেরই জানা। তাহলে কেন আগেভাগে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেননি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? অবশ্য বিরোধীরা বলছেন, পুলিশ কর্তাকে কদর্য ভাষায় আক্রমণের পরেও যে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার সাহস দেখাতে পারে না, সেখানে তো বোঝাই যাচ্ছে যে, অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূলের কত বড় সম্পদ! পর্যবেক্ষকদের মতে, অনুব্রত মণ্ডলের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। এতদিন ধরে যেভাবে মানুষের ওপর তিনি অত্যাচার করেছেন, যেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপাচার্যের প্রতি তিনি অন্যায় করেছেন, তাতে এতদিন সবাই চুপ থাকলেও, তার ভাইরাল অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ কর্তাকে কদর্য আক্রমণ করেছেন, তাতে তার বিরুদ্ধে কিন্তু সকলেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই অনুব্রত মন্ডলের দোষ, ত্রুটি ঢাকার মরিয়া চেষ্টা হলেও, শুধু অডিও ক্লিপ নয়, এতদিন ধরে তার অত্যাচারের করুন কাহিনী একের পর এক প্রকাশ্যে আসার ফলে এবার চরম বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিম তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেই দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।