প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- অনুব্রত মণ্ডলের যে অডিও ক্লিপ সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, তাতে মুখ দেখানোর মত জায়গা নেই তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের। তারা বাইরে যে কথাই বলুক না কেন, ভেতরে ভেতরে যে চরম লজ্জিত এবং তারাও যে সকলে চাইছেন যে, অনুব্রত মণ্ডলকে আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে গ্রেফতার করা হোক, এটা স্পষ্ট সকলের কাছেই। কিন্তু কি কারনে তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন না? কার নির্দেশ ছাড়া তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ? এটাও দিনের আলোর মত স্পষ্ট বিরোধীদের কাছে। তবে একদিকে পুলিশ মন্ত্রী এবং অন্যদিকে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে নিজের দলের মধ্যেই রীতিমত বিড়ম্বনার মুখে পড়ে গিয়েছেন। যে সৌগত রায় সব ব্যাপারে ভেবেচিন্তে কথা বলেন, তার মত বর্ষীয়ান সাংসদও এবার দলের ওপরেই চাপ বাড়িয়ে জানিয়ে দিলেন বড় কথা।
ঠিক কি বলেছেন দমদমের বর্ষিয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়? অনুব্রত মণ্ডলের অডিও ক্লিপ প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আর তাতেই তিনি বলেন, “অত্যন্ত লজ্জাজনক। রাজনীতির ভাষায় যদি অশালীন কথা চলে আসে, তাহলে তো সেটা খারাপ। দলের এবং দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিরই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” আর এখানেই একাংশ বলছেন, সৌগতবাবু বিষয়টাকে মোটেই ভালোভাবে নিতে পারেননি। পাশাপাশি এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, অনুব্রত মণ্ডল এত বড় কথা বলে দিলেন, তারপর তৃণমূল শুধুমাত্র তার কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা চেয়েই বসে থাকলো! পুলিশের তো অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস অনুব্রত মণ্ডল ক্ষমা চেয়ে নিলেন, তারপরেই তার সমস্ত কিছু মাফ করে দিল? বরঞ্চ তৃণমূলের তো এই কাজ করা উচিত ছিল যে, এই ঘটনা ঘটার পর অনুব্রত মণ্ডলকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ না দিয়ে তাকে ঘাড় ধাক্কা থেকে দল থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু সেটা না করে গোটা বিষয়টিকে নিয়ে যেভাবে একটা ছেলেখেলা মূলক বিষয় হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে। তাতে কিন্তু বিদ্রোহটা এবার শুরু হচ্ছে তৃণমূলের মধ্যে থেকেই।
বিজেপির দাবি, তৃণমূল তো এই সমস্ত বক্তব্যকেই হয়ত অনুমোদন করে। সেই কারণেই অনুব্রত মণ্ডলকে শুধুমাত্র ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। তারপরেও তাদের সরকারের পুলিশকে এইভাবে তাদের দলের নেতা কদর্য ভাষায় আক্রমণ করলেন, অথচ তিনি বহাল তবিয়তে এখনও পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করার সাহস হচ্ছে না পুলিশের। শুধু তাই নয়, যে দলের তিনি নেতা, সেই দল তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারল না। তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে যে, অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূলের কত বড় সম্পদ! আসলে তৃণমূলের যেমন সংস্কৃতি, তেমনই তাদের আচরণ বলেই কটাক্ষ গেরুয়া শিবিরের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল যে পদক্ষেপই নিক না কেন বা পুলিশ এখনও পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করুক বা না করুক, সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে কিন্তু ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। আর শুধু সাধারণ মানুষ নয়, তৃণমূলের যারা জনপ্রতিনিধি, যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন, তারাও কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের এই ভাষা, এই শব্দকে কোনো মতেই মেনে নিতে পারছেন না। কারণ তারা জানেন যে, ভবিষ্যতে তাদেরকে মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে যে, অনুব্রত মণ্ডলকে কেন এখনও পর্যন্ত দলে রাখা হয়েছে? কেন তাকে এত বড় অন্যায় অপরাধের পরেও পুলিশ গ্রেপ্তার করার সাহস দেখাতে পারল না? তাই শুধু ক্ষমা পত্র চেয়ে নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে মাফ করে দিলে যে হবে না, দলের শৃংখলা রক্ষা কমিটিকে যে আরও বড় ব্যবস্থা নিতে হবে, ঘুরিয়ে সেটাই বুঝিয়ে অনুব্রত মণ্ডল ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত বিধ্বস্ত করে দিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।