প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
পশ্চিমবঙ্গ মানেই এককালে ধরা হত সংস্কৃতির রাজ্য। কিন্তু এখন সেখানে ভুয়ো বাংলাদেশী এবং অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দ্বারা ছেয়ে গিয়েছে বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। মাঝেমধ্যেই ভুয়ো আধার কার্ড, রেশন কার্ডের মত তথ্যকে হাতিয়ার করে এই রাজ্যে অনেক অনুপ্রবেশের মত ঘটনা ঘটছে। যার ফলে বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে গোটা দেশ উদ্বিগ্ন। বিজেপির হাইপ্রোফাইল নেতারা রাজ্যে এসে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, গোটা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলায় পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সম্প্রতি রাজস্থানে বাংলা থেকে যাওয়া ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন বিধানসভায় ইটাহারের বিধায়ক সেই কথা তুলে ধরতেই তা নিয়ে বলতে গিয়ে নিজেই কি আরও বেশি করে প্রশ্নের মুখে পড়ে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

কি ঘটনা ঘটেছে? এদিন বিধানসভায় নিজের বিধানসভা এলাকার একটি পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে নিটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশাররফ হোসেন। তিনি দাবি করেন যে, তার বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মান্নাই অঞ্চলের খিসাহার গ্রাম সহ বেশ কিছু গ্রামের ৩০০ জনকে রাজস্থানে আটকে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা সেখানে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছিলেন। কিন্তু তাদের সেখানে যেভাবে আটকে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় সোচ্চার হয়েছেন তিনি‌। আর তারপরেই সেই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রাজস্থানের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের বাঙ্গালীদের অসম্মান করলে তোমরাও সম্মান পাবে না। বাংলার ২২ লক্ষ্য পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে কাজ করেন। বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পুশব্যাক করবে? তামিল বললে কি শ্রীলঙ্কায় পাঠাবে? আর গোর্খা যারা, তারা কি নেপালে পাঠাবে? আসলে বাংলায় কথা শুনলেই এরা জ্বলে।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এটাও জানিয়ে দেন যে, এই ভয়ানক অবস্থার প্রতিবাদে তারা আগামীদিনে পথে নামতে চলেছেন।

আর মুখ্যমন্ত্রীর এই সমস্ত বক্তব্যের পরেই বিরোধীদের পক্ষ থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী তো তাহলে নিজেই স্বীকার করে নিলেন যে, এই রাজ্যের প্রচুর মানুষ বাইরে রাজ্যে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। তাহলে কি এটা তার সরকারের ব্যর্থতা নয়? তার সরকারের আমলে নাকি প্রচুর কাজ আছে, তাহলে এই রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষকে কেন বাইরে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে? এই উত্তরটা কি আগে দেবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আর সব থেকে বড় কথা, রাজস্থানে গিয়ে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশী বলে হেনস্থা করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলছেন, তার কতটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তা কেউ জানে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে সাম্প্রতিককালে একাধিকবার বাংলাদেশী থেকে শুরু করে অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য সামনে এসেছে। তাই সেখানে একটি ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই যেভাবে পথে নামার মত হুঁশিয়ারি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিলেন, তাতে বিরোধীরা এই প্রশ্ন তুলছেন যে, শুধুমাত্র এই সমস্ত ভুয়ো বাংলাদেশিদের বাঁচানোর জন্য নিজের ভোট ব্যাংক সুরক্ষিত রাখার জন্যই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই তৎপরতা?

বিরোধীদের দাবি, গোটা পশ্চিমবঙ্গ এখন দ্বিতীয় বাংলাদেশের রূপ নিচ্ছে। অবিলম্বে তৃণমূল সরকারকে না ছড়ালে এই ভুয়ো বাংলাদেশী এবং অনুপ্রবেশকারীদের বাড়বাড়ন্ত আরও বাড়বে। গোটা দেশের কাছে এখন বাংলার নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে যথেষ্ট চিন্তা। তাই সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজস্থানে খেদানোর প্রক্রিয়া শুরু হতেই রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্জন তর্জন শুরু করে দিলেন। তবে তার এই সমস্ত কিছুতে লাভের লাভ কিছু হবে না। তার সরকারের ব্যর্থতার জন্যই যে পরিযায়ী শ্রমিক এত বাড়ছে এবং অন্য রাজ্যে যাচ্ছে, তা যেমন স্পষ্ট, ঠিক তেমনই তিনি পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারছেন না জন্যেই আজকে বাংলাকে নিয়ে গোটা দেশে চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। আর এর দায় সম্পূর্ণরূপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিতে হবে বলেই দাবি করছে বিরোধী শিবির।