প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা যে রসাতলে গিয়েছে, তা নতুন করে বলতে হবে না। রাজ্যের একের পর এক বেনজির সিদ্ধান্ত ঘিরে এমনিতেই বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। আর তার মধ্যেই এই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের সম্প্রতি সরকার এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলির গ্রন্থাগারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ১৯ টি বই রাখার যে নির্দেশ, তা সামনে এসেছে। যার ফলে রীতিমত বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যেখানে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে চিনবে, তাদের বই পড়বে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বই কেন স্কুলে থাকার ব্যাপারে বাধ্যতামূলক নির্দেশিকা জারি করবে শিক্ষা দপ্তর? এটা কি ফ্যাসিস্ট আচরন নয়? আর এই সমস্ত প্রশ্নের মধ্যেই এবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার যে কথা বলে দিলেন, তার পরে আরও বেশি করে প্রশ্ন উঠছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে যে, সত্যিই কি হিটলারের শাসনকেও হার মানাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ১৯ টি বই স্কুলগুলির গ্রন্থাকারে রাখতে হবে বলে জানানো হয়েছে। যে নির্দেশকে অনেকেই ভালো চোখে নিতে পারছেন না। আর সেই ব্যাপারেই এদিন সরকারকে রীতিমত ধুয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন,য়”কে কি পড়বে, তা কি সরকার ঠিক করে দিতে পারে? সরকার বড়জোর এটা বলতে পারে, একটা রেকমেন্ডেশন লিস্ট পাঠিয়ে যে এই বইগুলির মধ্যে থেকে বই লাইব্রেরীতে রাখতে পারেন। কখন ই সরকার বলতে পারে না, নির্দিষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বইগুলি স্কুল লাইব্রেরীতে রাখতে হবে! মুখ্যমন্ত্রী বই যদি এতই ভালো হবে, তাহলে সেই বইগুলি কেন বাজারের বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় না? ভালো বই হলে মানুষ বইয়ের দোকানে গিয়ে যেমন শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দের বই কেনে, মুখ্যমন্ত্রীর বইও কিনবে। তাতে একটা কম্পিটিশন বজায় থাকবে। পাশাপাশি সুকান্তবাবু আরও বলেন, “এই এপাং, ওপাং, ঝপাং জাতীয় বই পড়লে ছাত্রছাত্রীরা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এসব হিটলার সেই সময় জার্মানিতে এই মানসিকতা চালু করেছিল।”

বিরোধীদের দাবি, এই রাজ্যের স্কুলগুলিতে সঠিক পরিকাঠামো নেই। কোথাও ছাদ ভেঙে পড়ছে, কোথাও শিক্ষকের অভাব। গোটা শিক্ষা দপ্তরটাই এখন জেলের মধ্যে রয়েছে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর এখন মুখ্যমন্ত্রীকে সেরা হিসেবে দেখানোর জন্য তার লেখা বই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার জন্য বাধ্যতামূলক নির্দেশিকা জারি করছে। এটা হিটলারি শাসনকেও অতিক্রম করে গিয়েছে। অবিলম্বে বাংলাকে বাঁচানোর জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলেই দাবি করছেন তারা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর যে নির্দেশিকা জারি করেছে এবং যেভাবে স্কুলগুলিতে গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখার ব্যাপারে বাধ্যতামূলক নির্দেশিকা জারি করেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা জানবে সাহিত্য, ইতিহাস। সেখানে দাঁড়িয়ে কোনো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি এখন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় রয়েছেন, তার লেখা বই কেন সেই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ানোর ব্যাপারে বাধ্যতামূলক নির্দেশিকা জারি করা হবে? এটা কি চূড়ান্ত ফ্যাসিস্ট শাসকের নমুনা নয়? তাহলে কি শিশুমনেও শুরু থেকেই রাজনীতির বিষ ঢুকিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়ে নিলো এই রাজ্যের প্রশাসন? তাই কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সুকান্তবাবু হিটলারের মানসিকতার সঙ্গে যেভাবে বর্তমান শাসক দল এবং মুখ্যমন্ত্রী মানসিকতার তুলনা করলেন, তা অত্যন্ত যথোপযুক্ত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুকান্তবাবুর এই কটাক্ষ বানের পরে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর তাদের যে বিতর্কিত নির্দেশ, তা সরিয়ে নেয়, নাকি শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য শিশু মনের ভেতরে রাজনীতির বিষ ঢুকিয়ে দিতে নিজেদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, সেদিকেই নজর থাকবে গোটা রাজ্যবাসীর।