প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- জঙ্গি সন্দেহে ধৃত বাংলাদেশি শাব রাডির নাম পশ্চিমবঙ্গের দুই জায়গার ভোটার তালিকায় থাকায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল। মুর্শিদাবাদের নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, শাব স্থানীয় বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিলেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সন্দেহ না করেই নাগরিক শংসাপত্রে সুপারিশ করেন। বিষয়টি সামনে আসার পর সইদুল স্বীকার করেন, ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, বিশেষ করে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে।

এদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু মৎস্যজীবী চক্রের মাধ্যমে ভুয়ো পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। টাকার বিনিময়ে সরকারি কর্মীদের একাংশ এই কাজে সহায়তা করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। একই সুরে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও জানান, এসব কারচুপি চালাচ্ছে একটি সুগঠিত চক্র, যার সঙ্গে তৃণমূলের কিছু কর্মীর যোগ রয়েছে। তবে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, বিএসএফের নজরদারির দুর্বলতার সুযোগে বাংলাদেশি হিন্দু অনুপ্রবেশকারীরা বিজেপির আশ্রয়ে ভোটার কার্ড পাচ্ছেন।

মালদহ জেলার লাভলি খাতুনের ঘটনা সেই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। রশিদাবাদ পঞ্চায়েতে বসবাসকারী লাভলি বংশপরিচয়ের শংসাপত্র জোগাড় করেন পাশের কুশিদা পঞ্চায়েত থেকে। পঞ্চায়েত সদস্যের সহযোগিতায় তিনি ভুয়ো পরিচয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলেন এবং তৃণমূলের হয়ে পঞ্চায়েত প্রধানও হন। পরে প্রশাসন তাঁকে অপসারণ করে এবং তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও তৃণমূল লাভলির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে, দলীয় স্তরে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে শুনানি বাধ্যতামূলক এবং আবেদনকারীর নথিপত্র ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হবে। তিনি জানান, পঞ্চায়েত প্রধানদের শংসাপত্র প্রদান প্রক্রিয়াও এখন ‘ওটিপি’-নির্ভর এবং অনলাইনে রেকর্ড থাকবে, ফলে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, ভুয়ো ভোটার শনাক্ত করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, এফআরআরও এবং কমিশন একযোগে কাজ করছে। কমিশনের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে—গাফিলতি প্রমাণিত হলে দায়ী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করা হতে পারে। বিধানসভা ভোটের আগে এই সমস্যা কতটা সমাধান হয়, তা সময়ই বলবে।