প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- গতকাল থেকেই বোলপুরের এক পুলিশ কর্তাকে এক ব্যক্তি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন, যিনি নিজেকে বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল বলে পরিচয় দিচ্ছেন। এরকম একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। যদিও বা তার সত্যতা যাচাই করেনি প্রিয়বন্ধু বাংলা। তবে আজ সেই অডিও ক্লিপের পরিপ্রেক্ষিতেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
আর তা না হলে তার বিরুদ্ধে শোকজ করা হবে বলে জানিয়ে দেয় তৃণমূল। আর দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, সেই কথা ভেবে অনুব্রত মণ্ডল যে ক্ষমা চাইবেন নির্লজ্জের মত, সেটা সকলেই আঁচ করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন ছিল যে, যদি অনুব্রত মণ্ডল এই ঘটনার পরে ক্ষমাও চেয়ে নেন দলের কাছে, তারপর কি প্রশাসনের সমস্ত পদক্ষেপ বন্ধ হয়ে যাবে? দল এবং প্রশাসন তো আলাদা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন তৃণমূল দলের নেত্রী, ঠিক তেমনই তো পুলিশ মন্ত্রীও। তাহলে পুলিশকে এত বড় অশ্লীল গালিগালাজ করার পরেও অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কি আইনানুগ পদক্ষেপ নেবেন না এই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান?
বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই দলের নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই চিঠি দিয়ে দলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। যেখানে দিদির পুলিশের কাছে ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি বলে অনেক অনুনয়, বিনয় করে চিঠিতে অনেক কথা লিখেছেন তিনি। এমনকি কোনো পুলিশ তাকে ভুল বুঝে থাকলে তিনি দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী বলেও জানিয়ে দিয়েছেন সেই চিঠিতে।
আর এখানেই প্রশ্ন, ক্ষমা চাইলেই কি সাত খুন মাফ হয়ে গেল? একজন পুলিশকর্তার মা, বউকে টেনে একজন তৃণমূল নেতা যে অশ্লীল গালিগালাজ করেছেন, কি করে চুপ করে থাকতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এটা কি তার গায়ে লাগছে না! তাকে আঘাত করছে না? কারণ তার দপ্তরের আন্ডারে থাকা একজন পুলিশ কর্মী, তাকে এত অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার পরে অনুব্রত মণ্ডলকে কি করে তিনি ছাড় দিয়ে দিতে পারেন? শুধু দলের পক্ষ থেকে কড়া ভাষায় ধমক দেওয়া হলো, অনুব্রত মণ্ডল ক্ষমা চেয়ে নিলেন, তাহলেই তার সমস্ত দোষ মুকুব হয়ে গেল?
বিরোধীদের দাবি, এই ঘটনার শেষ দেখতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অচিরেই অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে ঢোকানোর মত ব্যবস্থা নিতে হবে। যে রাজ্যের পুলিশ বিরোধীদের সামান্য মিটিং মিছিল করতে দিতে চায় না, কেউ সমালোচনা করলে মিথ্যে মামলা দিয়ে তাদের জেলে ঢোকায়, সেই রাজ্যের একজন পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে এত অশ্লীল কথা বলার পরেও কি করে তা সহ্য করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? যদি ক্ষমতা থাকে, তাহলে অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে ঢুকিয়ে তিনি রাজধর্ম পালন করুন। আর যদি তিনি এই কাজ না করতে পারেন, তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে যে, এই রাজ্যের পুলিশ এবং পুলিশ মন্ত্রী অত্যন্ত নির্লজ্জ বলেই সোচ্চার হচ্ছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের সাধারণ মানুষ বা বিরোধীরা নয়, তৃণমূলের ভেতর থেকেও কিন্তু অনেকে প্রশ্ন তুলছেন যে, এই ঘটনায় অন্তত রাজধর্ম পালন করা উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যে অন্যায় মূলক কাজ, যে অশ্লীল আচরণ, যে হুমকি অনুব্রত মণ্ডল দিয়েছেন, তা কোনো সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। পুলিশের বাড়িরও তো লোকজন রয়েছে, তারা এসব শুনে কি ভাববেন? তারা কি আদৌ তার বাড়ির ছেলের অপমান সহ্য করতে পারবেন? যে পুলিশকর্তার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটলো,, তিনি কি আদৌ মাথা উঁচু করে কাজ করতে পারবেন? তার ভেতরে ভেতরে যে যন্ত্রনা তৈরি হচ্ছে, অন্তত তাকে মান্যতা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবার একটা কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দাবি উঠছে জনতার মধ্যে থেকেই।