প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- গোটা রাজ্যের মানুষ তাকিয়ে ছিলেন যে, অনুব্রত মণ্ডল কবে পুলিশের নোটিশে সাড়া দিয়ে হাজিরা দেন! ঘটনা ঘটার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে দুবার তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রত্যেকবারই তা এড়িয়ে যান। যার ফলে প্রত্যেকেই প্রশ্ন তুলেছিল যে, বিরোধীরা হলে তো বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে পুলিশ তাকে জেলে ঢুকিয়ে দিত। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে? শুধুমাত্র তৃণমূল নেতা বলেই কি তাকে বাড়ি থেকে তুলে আনতে পারছে না পুলিশ? আর বিরোধীদের এই প্রশ্নের মুখে পড়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রশাসন, সবাই চাপের মুখে পড়ে যায়। আর অবশেষে আজ এসডিপিও অফিসে হাজিরা দিলেন অনুব্রত মণ্ডল।

জানা গিয়েছে, কিছুক্ষণ আগেই পুলিশের নোটিশের সাড়া দিয়ে এসডিপিও অফিসে পৌঁছে গিয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। বলা বাহুল্য, অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেও অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা বারবার করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজ্যবাসীর মধ্যে। তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করলেও এবং তাকে নোটিশ পাঠালেও কেন তিনি যাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। শুধু তাই নয়, অনুব্রত মণ্ডল না হলে যাচ্ছেন না! কিন্তু তাকে তার বাড়িতে গিয়ে কেন তুলে আনতে পারছে না পুলিশ? এই প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা বলেছিল যে, এই রাজ্যের পুলিশ সম্পূর্ণরূপে দলদাসে পরিপূর্ণ হয়েছে। আর সেই কারণেই অনুব্রত মণ্ডল এত বড় অপরাধ করার পরেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যা পুলিশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের একজন আধিকারিকের মা, বউ তুলে একজন তৃণমূল নেতা অপমান করছেন! সেক্ষেত্রে পুলিশের জন্য সাধারণ মানুষ লড়াই করছেন। কিন্তু পুলিশ কেন মেরুদন্ড সোজা রেখে তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করতে পারছে না? তারা কি বাড়ি গিয়ে মহিলা সদস্যদের সামনে মুখ দেখাতে পারছেন? এই সমস্ত প্রশ্ন বিরোধীদের মধ্যে থেকে উঠেছিল।

তবে আজ সেই অনুব্রত মণ্ডল ঘটনা ঘটার সাত দিন পর অবশেষে এসডিপিও অফিসে হাজিরা দিলেন। তবে তিনি হাজিরা দেওয়ার পরেই যে প্রশ্নটা সবথেকে বেশি মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা হলো, পুলিশ কি তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে? তাকে জেরা করে কি কঠোর শাস্তি গ্রহণ করবে পুলিশ? বিরোধীরা বলছেন, সেই সমস্ত আশা করাই বৃথা। অনুব্রত মণ্ডল এই পুলিশের কাছে কোনো অপরাধই করেননি। তাদের পরিবার-পরিজন তুলে কথা বলার পরেও, অনুব্রত মণ্ডল পুলিশের কাছে সবথেকে বড় নির্দোষ ব্যক্তি। তিনি এতদিন পরে পুলিশের কাছে হাজিরা দিয়েছেন, এটাতেই তো পুলিশ ধন্য হয়ে গিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করার মত মেরুদন্ড এই রাজ্যের অপদার্থ প্রশাসনের নেই। যদি কেউ অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেন, তাহলে তাকেই চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, গোটা রাজ্যজুড়ে যেভাবে অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সামনে আসছিল, তাতে চাপ বাড়ছিল নবান্নের। দলগত এবং প্রশাসনিক ভাবে অত্যন্ত ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পুলিশ কি করছে, কেন শুধুমাত্র তৃণমূল নেতা বলে তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আর এটা বুঝতে পেরেই হয়তো ঘটনা ঘটার সাত দিন পর অবশেষে অনুব্রত মণ্ডলকে পুলিশের সামনে হাজিরা দিতে বলার নির্দেশ এসেছে ওপর তলা থেকে। আর সেই জন্যই তিনি এবার হাজিরা দিলেন। কিন্তু হাজিরা দিলেই কি সাত খুন মাফ? এবার সেই অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার মত সাহস এই রাজ্যে পুলিশের হয় কিনা, সেদিকেই নজর গোটা রাজ্যবাসীর।