প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে দিলীপ ঘোষ যাওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল চর্চা। আর তারপর থেকেই তৃণমূল এমন ভাবে প্রচার শুরু করে দিয়েছিল, যেন দিলীপ ঘোষ যেন তাদেরই দলের লোক। আর শাসকের হাতে দিলীপ ঘোষও যে বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছেন, দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে তিনি যে বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন তা সকলেই জানতেন। তবে তৃণমূল চাইছিল, দিলীপ ঘোষকে দিয়ে বিজেপির অস্বস্তি যাতে বাড়ানো যায়। কিন্তু দিলীপ ঘোষ যে বিজেপির এখন ক্লোজড চ্যাপ্টার, তা কি এদিন মোদীর সভা থেকেই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল?
প্রসঙ্গত, আজ আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একাধিক সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন কর্মসূচি রয়েছে। যেখানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এতদিন ত্রয়ী নেতার ওপরেই ভরসা রাখতে দেখা যেত বঙ্গ বিজেপিকে। প্রত্যেকটি সভা, সমিতিতে বিজেপির দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারের ছবি থাকত। কিন্তু এই প্রথম দিলীপ ঘোষকে আমন্ত্রণ না জানানোর পাশাপাশি তার ছবিও রাখা হলো না সেই সভা মঞ্চে। আর সেই চিত্র সামনে আসতেই তৃণমূল যে একেবারে ডাহা ফেল হয়ে গেল বিজেপিকে চাপে রাখার এই পরিকল্পনায়, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত পর্যবেক্ষকরা।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন দিলীপ ঘোষকে উত্তরবঙ্গের সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলো না? দিলীপবাবুর অবশ্য যুক্তি, “কলকাতায় নরেন্দ্র মোদী আসলে সেখানে তারা থাকবেন। এটা উত্তরবঙ্গের কর্মসূচি। তাই সেখানে সেখানকার কর্মীরা থাকবেন।” তবে শুভেন্দু অধিকারী তো উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা নন। তিনি তো রাজ্য বিজেপির যেমন শীর্ষস্তরের নেতা, ঠিক তেমনই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি তো ডাক পেলেন, তাহলে দিলীপবাবু কেন ব্রাত্য থেকে গেলেন?
অনেকে বলছেন, দিলীপ ঘোষের বর্তমান আচার-আচরণ নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নয় গেরুয়া শিবিরের একাংশ। তারা বুঝতে পারছে যে, ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিলীপ ঘোষ যে সমস্ত কান্ড ঘটাচ্ছেন, তাতে তিনি কখন কি করবেন, তা বলা যাবে না। তাই তাকে এখন বেশি প্রশ্রয় দিলে বা তাকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই দিলীপ ঘোষকে নিয়ে তেমন কিছুই বলতে চাইছে না গেরুয়া শিবির।
এদিকে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি নিয়ে শুভেন্দুবাবুকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আয়োজক আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপি। তারা বলতে পারবে, তারা কাকে ডেকেছে, কাকে ডাকেনি।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিলীপ ঘোষ দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল বাড়তি হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে। এমনকি মাঝে এই জল্পনাও তীব্র হয়েছিল যে, দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের সঙ্গে গোপনে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। এমনকি তৃণমূলও দিলীপ ঘোষকে হাতিয়ার করে বিজেপির যতটা অস্বস্তি বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা শুরু করেছিল।
তবে তৃণমূলের সেই কৌশল যে একেবারেই ফেল হয়ে গেল, দিলীপ ঘোষকে যে কোনোমতেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না বিজেপি, মোদীর সভায় তার আমন্ত্রণ না পাওয়ার মধ্যে দিয়েই তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। যার ফলে দিলীপবাবুর অবস্থা এখন অনেকটা না ঘরকা, না ঘাটকা। আর তৃণমূলও যে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের কাছে একেবারেই নেহাত শিশু, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।