প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – যারা কথায় কথায় বলেন যে, এই রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত হয় না, কোথাও একটা রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের সেটিং রয়েছে জন্যেই যারা দুর্নীতি করেছে, তারা বেঁচে যান! তারা হয়ত পুরোটা জানেন না। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, দুর্নীতি করে জেলে যাওয়ার পরেও অনুব্রত মণ্ডল থেকে শুরু করে মানিক ভট্টাচার্যের মত নেতারা তো ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। ফলে সুবিচার কোথায় হলো? কিন্তু যারা ছাড়া পেয়েছেন, তারা কি সত্যিই শান্তিতে আছেন? এটা আর যাই হোক, একসময় দীর্ঘদিন ধরে জেল খাটা বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে দেখলেই বুঝতে পারা যাবে যে, তিনি কতটা শান্তিতে আছেন! বোঝা যাবে যে, জেল থেকে ফিরে এলেও জীবনধারণ করা কার্যত দায় হয়ে যাচ্ছে এই তৃণমূল বিধায়কের কাছে। কিন্তু কেন একথা বলা হচ্ছে? কারণ, ইডি যে পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে নিয়েছে, তাতে তিনি জেলের বাইরে থেকেও খুব একটা শান্তিতে নেই।
জানা গিয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন এই মানিক ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিন পর তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তবে মুক্তি পেলেও তার পুরনো সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, যেখানে তার বিধানসভার বেতন পর্যন্ত ঢোকে, সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফলে সেখানে অর্থের আদান-প্রদানের পথ বন্ধ। তাই এবার বাধ্য হয়েই এই সমস্যা মেটাতে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। যেভাবেই হোক, জীবন ধারন তো করতে হবে। কোথা থেকে অর্থের যোগান আসবে! তাই এবার ইডির ফ্রিজ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে না পারায় নতুন করে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এই তৃনমূল বিধায়ক। আর সেখানেই তার জুন মাসের বেতন ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বলা বাহুল্য, ২০২২ সালে অক্টোবর মাসে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার করা হয় তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। তবে ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু মুক্তি পেলেও ইডির পক্ষ থেকে তার যে সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছিল, তা আর খুলে দেওয়া হয়নি। যার ফলে তিনি অত্যন্ত চাপে পড়ে যান। তাই এবার বাধ্য হয়েই বিধানসভায় নতুন করে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে যাতে তার বেতন জমা দেওয়া হয়, তার জন্য তিনি আবেদন করেন। আর সেই ব্যাপারে অনুমতি মিলতেই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে এই তৃণমূল বিধায়ক। এদিন সেই ব্যাপারে মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এখনও কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি ইডি। অথচ আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। তার জন্যে আমি চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছি। বেতন বন্ধ, পেনশন বন্ধ। এভাবে আর কতদিন চলবে? আমি আইনি পথে লড়াই করছি। নতুন করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছি শুধু বেঁচে থাকার জন্য। এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করে এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে তার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিনা, কি আইনি জটিলতা রয়েছে, সেটা সময় বলবে। তিনি আদৌ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন কিনা, সেটা তো তদন্তকারী সংস্থার বিষয় এবং আদালতের বিষয়। সেটা তারা দেখবে। তবে যারা এতদিন ধরে বলাবলি করছিলেন যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ঠিকমত পদক্ষেপ নিতে পারে না, তাদের ভাবনা যে ভুল, তা এই একটি ঘটনার মধ্যে দিয়েই পরিষ্কার। একদিন না একদিন সকলেই হয়ত জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু জামিন পেয়ে গেলেও কত বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছেন এই মানিক ভট্টাচার্য, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। যেভাবে নিজের জীবনধারণের জন্য আবার নতুন করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য হলেন তৃণমূলের এই বিধায়ক, তাতে স্পষ্ট যে, ইডির এক ঝটকাতেই তার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। গতি প্রকৃতি দেখে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।