প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- কবি বলেছিলেন, কতটা পথ চললে তাকে পথিক বলা যায়। আর আজ অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিও ক্লিপ নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি, তখন এই রাজ্যের পুলিশ, বলা ভালো বীরভূম জেলার পুলিশ যে কান্ডটা ঘটিয়ে দিলো, তাতে অনেকেই বলছেন যে, কতটা নির্লজ্জ হলে দলদাস পুলিশ হওয়া যায়। আইসিকে কদর্য ভাষায় হুমকি দেওয়ার পর ছয়দিন পেরিয়ে গিয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হলেও এখনও পর্যন্ত তাকে হাজিরা না দেওয়ার জন্য কোনো কড়া পদক্ষেপ নিতে পারেনি পুলিশ। অথচ অনুব্রত মণ্ডল কিভাবে আইসিকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সেই অডিও ক্লিপ চালানোর জন্য গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের ওপর নেমে এলো আঘাত। রাজ্যের এক নামী সাংবাদিককে বীরভূম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো হলো নোটিশ। কেন তিনি বারবার করে অনুব্রত মণ্ডলের সেই ভাইরাল অডিও ক্লিপ সম্প্রচার করেছেন, তা নিয়েই ঘোর আপত্তি এই পুলিশের।

জানা গিয়েছে, এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দেকে ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে দুই পাতার চিঠি পাঠানো হয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে, “আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি যে, আপনি বিতর্কিত অডিও ক্লিপটি ক্রমাগত প্রচার করবেন না এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন প্রকাশ করবেন না। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার আপনার এই লাগাতার চেষ্টা কাঙ্ক্ষিত নয়। আইনের দৃষ্টিতে এর সংযম প্রয়োজন।” পাশাপাশি সেই চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে যে, “এফআইআর দায়েরের পর তদন্তকারী অফিসারের সামনে হাজির হওয়ার জন্য তাকে ৩০/৫/২০২৫ তারিখে আইন অনুযায়ী নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আপনি একটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের অংশ হয়ে অনুব্রত মণ্ডলের বিতর্কিত অডিও ক্লিপটি বারবার সম্প্রচার করেছেন এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য এবং পুলিশ এখনও অব্দি যে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, তার নূন্যতম যাচাই না করেই পুলিশ নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছেন। আপনি চ্যানেলে ক্রমাগত যে অভিযোগ তুলেছেন, তা তথ্যগতভাবে ভুল, অন্যায়, যাচাই না করা এবং অসত্য। এই ধরনের অভিযোগে কারও ভালো হবে না। বরং এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। আপনি কোনো ভালো উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ তোলেননি। বরং এতে মিশে রয়েছে বিদ্বেষ।”

তবে এখানেই থেমে থাকেনি পুলিশ। অবিলম্বে যাতে সেই অডিও ক্লিপ সম্প্রচার করা বন্ধ করা হয়, তার জন্য সাংবাদিককে দেওয়া হয়েছে কড়া বার্তা। পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠিতে লেখা হয়েছে, “আমাদের আশা ও বিশ্বাস, এই বার্তা পাওয়ার পর আপনি ওই মামলার তদন্ত সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। নয়ত আমরা ধরে নেব যে, এই সম্প্রচার ইচ্ছাকৃত এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা। তখন পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের ইচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ধারাবাহিক প্রচারের জন্য আপনার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। সেক্ষেত্রে আর কোনো রকম যোগাযোগ করা হবে না।”

আর এখানেই রাজ্যবাসীর প্রশ্ন যে, এটা কি করে করতে পারে এই রাজ্যের পুলিশ? অনুব্রত মণ্ডল একটা বাজে কথা বলেছেন, সেটা একজন সংবাদমাধ্যম দায়িত্বশীল মাধ্যম হয়ে সম্প্রচার করাটাই অপরাধ? অনুব্রত মণ্ডলের মত গুন্ডা নেতাকে পুলিশ ধরতে পারছে না। অথচ এই রাজ্যের প্রথম সারির এক সংবাদমাধ্যম, তার সেই কুকীর্তি দেখাচ্ছে জন্য তাকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে যে, তিনি যাতে সেই অডিও ক্লিপ আর সম্প্রচার না করেন! যদি করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে! বিরোধীরা বলছেন, এই ঘটনাতেই বোঝাই যাচ্ছে যে, এই রাজ্যের পুলিশ কতটা নিচে নামলে নিজেদের মমতা পুলিশ বলে পরিচয় দিতে পারে! অনুব্রত মণ্ডলের মত একজন অসভ্য নেতাকে গ্রেপ্তার না করে একজন নামী সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিককে যেভাবে পুলিশ চিঠি পাঠালো, তাতেই স্পষ্ট যে, এই রাজ্যে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভও প্রতিবাদ করলে সুরক্ষিত নয়।