প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- ভাইরাল অডিও ক্লিপকাণ্ডে যে বিপাকে অনুব্রত মণ্ডল পড়েছেন, তাতে চরম অস্বস্তিতে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও, দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও কেন শুধুমাত্র একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে তিনি বাড়িতে বসে রয়েছেন, কেন তাকে পুলিশ টেনে এনে জেলের ঘানি টানাতে পারছে না, এই প্রশ্ন বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে। বিরোধীরা এটাও বলছেন, এই ঘটনাতেই প্রমাণ হয় যে, এই রাজ্যের পুলিশ দলদাসের মত আচরণ করছে। তবে নিজেকে বাঁচাতে যে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট অনুব্রত মণ্ডল জমা দিয়েছেন, এবার সেই মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়েই তৈরি হয়েছে নয়া বিতর্ক। নিজেকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করলেও, পুলিশের কাছে তিনি কেন হাজিরা দিচ্ছেন না, শুধুমাত্র তৃণমূল নেতা বলেই তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্ন যখন উঠছিল, তখন অনুব্রত মণ্ডল ভেবেছিলেন যে, একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট তিনি জমা করে দেবেন, আর বিতর্কের মুখ থেকে রেহাই পাবেন। কিন্তু না, এবার সেই মেডিকেল সার্টিফিকেটেও যে বিতর্ক তৈরি হলো, তাতে নতুন করে সমস্যায় পড়ে গেলেন এই তৃণমূল নেতা বলেই মনে করছেন একাংশ।

বলা বাহুল্য, যে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট অনুব্রত মণ্ডল জমা দিয়েছেন, সেখানে যার সই রয়েছে, সেই হিটলার চৌধুরীকে নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একদিকে তিনি নাকি বিএমওএইচ। আবার অন্যদিকে তিনি শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের চিকিৎসক। স্বাভাবিকভাবেই একটি সরকারি পদে থেকে তিনি কি করে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হতে পারেন, সেই বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। আর সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ শুরু করেছে বিভাগীয় তদন্ত। গোটা বিষয়ের সবটাতেই যে জল মেশানো, অনুব্রত মণ্ডল নিজের কীর্তি ঢাকতে গিয়ে যে মেডিকেল সার্টিফিকেট সামনে এনেছেন, তাতে যে চিকিৎসকের নাম রয়েছে, তাকে নিয়ে যে কীর্তি সামনে চলে এলো, তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েও উঠে যাচ্ছে বড়সড় প্রশ্ন। অন্তত তেমনটাই দাবি বিরোধীদের।

ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বলেন, “অনুব্রত একটা খাস লোক। সেই বগটুই কাণ্ড থেকে আমরা দেখছি। কেন্দ্রের এজেন্সি হোক বা রাজ্যের পুলিশ, কেউই তার ধারে কাছে যাবে না। পুলিশ দলদাস করলে কি হয়, তার নমুনা তো বোলপুর থানার আইসি। একইভাবে প্রশাসনের দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, “পুলিশ কি করবে? দিদি যতক্ষণ না নির্দেশ দেবে, পুলিশের ক্ষমতা আছে? পুলিশের বাবার ক্ষমতা আছে কিছু করবে! যতক্ষণ না দিদি নির্দেশ দেবে!” কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের যে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন হিটলার চৌধুরী, তিনি একটি সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মরত হওয়ার পরেও কি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন? এই বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের কর্ণধার মলয় পিটের কাছে। তিনি বলেন, “আমরা ডিপার্টমেন্টকে জানতে চেয়েছিলাম, বিষয়টা কি? এই ধরনের কথা শুনছি! আজকে দেখলাম, ওরা একটা নোটিফিকেশন করেছেন, ওরা তদন্ত করছেন। তারপর ওরা রিপোর্ট দেবেন।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বীরভূম জেলায় শুধু নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে কিভাবে কি চলে, তৃণমূল নেতাদের বাঁচানোর জন্য যে সমস্ত রাস্তা আছে, তা তো আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। এখন শান্তিনিকেতনের সেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ যে কথাই বলুন না কেন, যে রিপোর্টই দিন না কেন, এটা তো স্পষ্ট যে, হিটলার চৌধুরী কিভাবে সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক হয়েও একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরের চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন! স্বাভাবিকভাবেই তদন্তের রিপোর্টের দিকে অবশ্যই সকলের নজর থাকবে। কিন্তু নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডল যে মেডিকেল সার্টিফিকেট সামনে এনেছেন, সেখানে হিটলার চৌধুরীকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে কিন্তু চাপ বাড়ছে নবান্নের। গতি প্রকৃতি দেখে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।