প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
কালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন নিয়ে খুব একটা আশাবাদী ছিল না বিজেপি। তারা খুব ভালো মতই জানে যে, একেই তো উপনির্বাচন। আর উপনির্বাচনে শাসকের পক্ষেই রায় যায়। আর যেখানে মুসলিম ভোটের সংখ্যা অনেকটাই বেশি, সেখানে বিজেপি জিতবে না, এই ব্যাপারে তারা নিশ্চিত ছিল। তবে ভোটের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গিয়েছে যে, বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকার পাশাপাশি একটা উল্লেখযোগ্য তথ্য সামনে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, যে সমস্ত হিন্দু এলাকা রয়েছে, সেখানকার ১০৯ টি বুথের মধ্যে ১০৮ টি বুথেই এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। যা তাদের কাছে অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক বটেই 2026 এর নির্বাচনের আগে। তবে সবথেকে যে বড় প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা হচ্ছে, বাম এবং কংগ্রেস করলোটা কি? এই বাংলার বুকে যখনই কোনো নির্বাচন হয়, তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেন, ঠিক সেই একই ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলা অপেক্ষা, সবথেকে বেশি বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায় বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের। যার ফলে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তাদের লাইন একেবারে মিলে যাচ্ছে এবং তার ফলেই অনেক ক্ষেত্রে যারা বাম, কংগ্রেসকে এই রাজ্যের বুকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবছে, তারা তৃণমূলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করছে বলেই উপলব্ধি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কালীগঞ্জের ফলাফল সামনে আসার পর বাম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যাকে প্রার্থী করা হয়েছিল, তার জামানত জব্দ হতেই শুভেন্দু অধিকারী যে বার্তা দিলেন, তাতে কি আদৌ ঘুম ভাঙবে সেই বাম, কংগ্রেসের?
শুভেন্দুবাবুর বক্তব্য, “এই রাজ্যের বুকে বাম এবং কংগ্রেসের প্রার্থী কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে তাদের জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছে। এরা প্রত্যেকটি ভোটে গিয়ে প্রথমেই বলে যে, সারা দেশের কোথাও বিজেপি কাজ করছে না, মোদীজি কাজ করছে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এরা নো ভোট টু মমতা বলে না। তাই আমি বলব, প্রথমে নো ভোট টু মমতা বলুন। তারপরে মানুষ কাকে পছন্দ করবে, সেটা মানুষের ব্যাপার। মানুষের ওপর ছেড়ে দিন। কিন্তু নো ভোট টু বিজেপি না বলে নো ভোট টু মমতা বলুন।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতকিছুর পরেও বাম এবং কংগ্রেসের কতটা শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, তা তো সময় বলবে। কিন্তু সত্যিই এবার এই দুটো দলের ভাবার সময় এসেছে। পশ্চিমবাংলার বুকে তারা রাজনীতি করছে, অথচ দিনের পর দিন অপ্রাসঙ্গিক থেকে যাচ্ছে। কেন তারা মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক হতে পারছে না? তার একটাই কারণ, তারা পশ্চিমবাংলায় তৃণমূলকে সরানো অপেক্ষা বিজেপির বিরুদ্ধে বেশি নিন্দা করতে সচেষ্ট। আর সেটা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, হিন্দু সনাতনীরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারছেন না। যার ফলে তারাও ঠিক মতো্ ভোট পাচ্ছে না, উল্টোদিকে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকছে। আবার তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনীর দ্বারা সেই বাম এবং কংগ্রেসের নেতারাও মাঝেমধ্যেই আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও তারা যেভাবে শুধুমাত্র বিজেপিকে এই অ্যাটাক করে চলেছেন, সেই জায়গার ধরনটা একটু বদলালে হয়তো পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে কিছুটা বদল আসবে। আর এই কথাই শুভেন্দু অধিকারী সেই বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের বার্তা দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন। তিনি বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, কালীগঞ্জে যে অশ্বডিম্ব ফলাফল তাদের হলো, যেভাবে তারা মুখ থুবড়ে পড়লেন, তাতে ভবিষ্যতের জন্য অন্তত “নো ভোট টু মমতা” এই কথাটা বলার চেষ্টা করুন বাম এবং কংগ্রেসের নেতারা। তারপর মানুষ কাকে সমর্থন করবেন, সেটা মানুষের কাছেই ছেড়ে দিন। কিন্তু তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরানোটা সবার আগে বেশি প্রয়োজন। তাই মানুষের পছন্দ, অবশ্যই মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যাকে পছন্দ করবে, তার দিকেই রায় দেবে। তবে বিজেপির বিরুদ্ধে বলার আগে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে সরানোর জন্য “নো ভোট টু মমতা” কবে বলেন বাম এবং কংগ্রেস নেতারা! কবে তারা সেটিংয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপির মত করেই প্যাঁচে ফেলার জন্য তৎপর হন, সেদিকেই নজর থাকবে গোটা রাজ্যবাসীর।