প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
আরজিকরের ঘটনার পরেই রাজ্যে আবার কসবায় আইন কলেজের মধ্যে যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং সেখানে যেভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রাক্তন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাতে এমনিতেই বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। আরজিকরের পরবর্তী সময়ে যে প্রতিবাদ গোটা রাজ্য জুড়ে হয়েছিল, আবার সেই প্রতিবাদ হবে না তো? তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে। আর এসবের মধ্যেই তৃণমূলের মধ্যেই যে কাদা ছোড়াছুড়ি পর্ব শুরু হয়ে গেল, তার ফলে এমনিতেই কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে দল অস্বস্তিতে, তার মধ্যে দলেরই নেতা,নেত্রীরা যেভাবে একে অপরের সঙ্গে দরজায় জড়িয়ে পড়লেন, তাতে রীতিমতো বিরক্ত স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তার কাছে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ যে, তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে কসবার এই গণধর্ষণ কান্ডকে সামাল দেবেন! নাকি দলের এই কাজিয়া বন্ধ করবেন?

বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই কসবা গণধর্ষণ কান্ডে তৃণমূলের মদন মিত্র এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তাকে দল কোনোভাবেই অনুমোদন করে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তারপরেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি কল্যানবাবু। পাল্টা এই দুই নেতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। আর তারপরেই মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “দেড় মাসের হানিমুন শেষ করে দেশে ফিরেই কি আমার পেছনে লাগা শুরু হয়ে গেল? আমি সব নারীকে সম্মান করি। কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে ঘৃণা করি. যাকে পার্লামেন্টের এথিক্স কমিটি বহিষ্কার করে, তাকে ঘৃণা করি।” অর্থাৎ এমনিতেই কল্যাণবাবুর সঙ্গে মহুয়া মৈত্রের যে অত্যন্ত তিক্ত সম্পর্ক, তা সকলেই জানেন। কিন্তু কসবার গণধর্ষণের পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পর যেভাবে তাকে খোঁচা দিয়েছেন মহুয়া মৈত্র এবং তার পাল্টা যেভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া দেবীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করলেন, তাতে কিন্তু তৃণমূলের ঘরে যে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং তার ফলে যে স্বয়ং দলনেত্রী দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে।

একইভাবে মদন মিত্র যেভাবে কসবার গণধর্ষণ কান্ড নিয়ে মুখ খুলেছেন এবং যেভাবে তিনি নির্যাতিতার বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন, তাতে কিন্তু আরও অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনিতেই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে এই ঘটনার পর। আর তার মধ্যে নির্যাতিতার একা কলেজে যাওয়া উচিত হয়নি বলে মদন বাবু যা মন্তব্য করেছেন, তার ফলে তৃণমূলের ওপরেই যে এর দায় বর্তাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তড়িঘড়ি মদন মিত্রকেও শোকজ করে তিন দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে শাসক দল যতই শক দিয়ে মাছ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, যেভাবে দলের ভেতরের অশান্তি এবং বিতর্কিত মন্তব্য সামনে চলে আসছে এবং যেভাবে এই ঘটনার পর ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা, তাতে তৃণমূল নিজেদের শৃঙ্খলা রক্ষা করবে, নাকি একদিকে দলনেত্রী এবং অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের ভেতরে থেকে রাজধর্ম পালন করে মানুষের মনে বিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করবেন, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যবাসীর কাছে।