প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – এত কিছুর পরেও কি তৃণমূল নেতারা শিক্ষা নিচ্ছেন না? তারা দেখতে পাচ্ছেন যে, অনুব্রত মণ্ডল কিভাবে ঘরে ঢুকে গেছে! তারপরেও কি জেলায় জেলায় কিছু অনুব্রত মণ্ডল রয়ে গেছেন? যারা তৃণমূলের এই খারাপ সময় বুঝেও শুধুমাত্র নেত্রীর কাছে নম্বর বাড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষকে পর্যন্ত হুমকি দিতে ছাড়ছেন না? গণতান্ত্রিক রাজ্যে শাসকের খারাপ কাজের বিরোধিতা বিরোধী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ করবেন, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু তৃণমূলের আমলে যেন অন্য আইন। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই এবার থেকে জুটতে পারে মার? হ্যাঁ, এই কথা আমরা বলছি না। এই কথা বলছেন একজন তৃণমূল নেতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি যে পোস্ট করেছেন, তারপর প্রশ্ন উঠছে যে, তৃণমূলের দম্ভ ঠিক কোন জায়গায় পৌঁছেছে!
কি ঘটনা ঘটেছে? জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের কালনা ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি প্রণব রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, “মাতৃতুল্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিরা কুৎসা করছেন, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। প্রয়োজনে হাত চালানোও যেতে পারে।” আর এই পোস্ট ঘিরেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, কথায় কথায় হাত চালানোর রেওয়াজ কেন শুরু হয়েছে এই রাজ্যে? কেন নিজেদের যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে বিরোধীদের বা যারা তাদের নেত্রীর কুৎসা করছে বলে তারা দাবি করছে, তাদের প্রতিহত করতে পারছে না? কেন শুধুমাত্র সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে হচ্ছে? প্রকাশ্যেই যদি নেতারা এইভাবে যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে তলায় তলায় তারা বিরোধীদের ওপর কি পরিমাণ নির্যাতন চালান, তা তো তৃণমূল নেতার এই পোষ্টের মধ্যে দিয়েই আরও বেশি করে পরিষ্কার হয়ে গেল বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেতার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে শুরু করেছে বিরোধীরা। জেলা বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন, “এ তো অনুব্রত মণ্ডলই দেখিয়ে দিয়েছেন। পুলিশকে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করার পরেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অর্থাৎ শাসকদলের জন্য ছাড় রয়েছে। বিরোধীরা কিছু বললে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন খুব সক্রিয়। তাদের গ্রেফতার করা হয়। আসলে তৃণমূল নেতারা এইভাবে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করতে চাইছেন।” একইভাবে তৃণমূল নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার।
কিন্তু বিরোধীরা যা খুশি বলে যাক, তাতে অন্তত তার কিছু এসে যায় না। তিনি যে কথা বলেছেন, তা ঠিক বলেছেন। ইতিমধ্যে আবারও সেই কথা বলে দাদাগিরি দেখাতে শুরু করেছেন তৃণমূলের সেই প্রণব রায়। প্রকাশ্যে এইভাবে সমালোচনা করলে বিরোধীদের হুমকি দেওয়া কি ঠিক? প্রণববাবু বলেন, “কেউ যদি আমার মাকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করে, তাকে কি আমি রসগোল্লা খাওয়াবো? যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ধরনের আক্রমণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে বলেছি।” তবে তৃণমূল নেতা না হয় এই কথা বললেন। কিন্তু রাজ্যে তো আইনের শাসন চলছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন। যদিও বা সেই আইনের শাসন কতটা তৃণমূল নেতাদের ক্ষেত্রে খাটে, সেই প্রশ্ন তো সকলের মনের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের হুমকি দিতে দেখা গেল একজন তৃণমূলের সভাপতিকে, তাতে পুলিশের কি ক্ষমতা আছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার? যদি পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, এই রাজ্যে আইনের শাসন রয়েছে! আর যদি অনুব্রত মণ্ডলের মত এই তৃণমূল নেতাকেও ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট যে, তৃণমূল যতদিন এই রাজ্যের ক্ষমতায়, ততদিন তাদের বিরোধিতা করলেই সাধারণ মানুষ হোক বা বিরোধী, সকলের কপালেই জুটবে উত্তম মধ্যম। অন্তত তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।