প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যে হিন্দুরা নিরাপদ নন। প্রতিনিয়ত হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভাঙ্গা থেকে শুরু করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। মহেশতলা থেকে শুরু করে মালদহ, মুর্শিদাবাদের ঘটনার পর তেমনটাই অভিযোগ করছে বিরোধীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা প্রতিনিয়ত সোচ্চার হয়ে বলছেন যে, এই রাজ্যে শাসকদলের দুটো টার্গেট। প্রথম হচ্ছে, মহিলারা, আর দ্বিতীয় হচ্ছে, হিন্দুরা। এমনকি বিরোধীদের পক্ষ থেকে যখন এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তখন রাজ্যের সাধারণ মানুষদের একটা অংশ আশঙ্কা করছেন যে, এখানে তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতা থেকে না সরালে পরবর্তীতে হিন্দু বলে কিছু থাকবে না। আর হিন্দু ভোটে ফাটল ধরার ভয়েই কি এবার নিজেদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মন পেতে একুশে জুলাইকে সামনে রেখে শেষমেষ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করলো রাজ্যের শাসক দল? কি সেই পরিকল্পনা?

বলা বাহুল্য, বর্তমানে জোর কদমে চলছে তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের প্রচার। জেলায় জেলায় মিটিং মিছিল করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে এদিন মালদা শহরে দেখা যায় এক অন্য ছবি। যেখানে সকাল সকাল মালদহের ইংরেজ বাজারে দেওয়াল লিখনের মধ্যে দিয়ে একুশে জুলাইয়ের প্রচার শুরু করে যুব তৃণমূল কংগ্রেস। আর সেখানেই উপস্থিত থাকতে দেখা যায় সাধু সন্ন্যাসীদের। আর এই চিত্র সামনে আসার পরেই প্রশ্ন উঠছে যে, তাহলে কি হিন্দু ভোট তৃণমূলের থেকে সরে যাচ্ছে, সেই কারণেই এই সাধু সন্তদের সামনে এনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন জয় করার চেষ্টা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব? যেভাবে রাজ্যে একের পর এক হিন্দু বিরোধী মনোভাব সামনে আসছে এবং হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে এবং তার ফলে প্রশাসন নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একুশে জুলাইয়ের আগে সাধুদের নিয়ে প্রচারে নেমে তারাই সবথেকে বড় হিন্দুপ্রেমী, এটা প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস?

ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়ে খোচা দিতে শুরু করেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না। এই রাজ্যে হিন্দুরা প্রতি মুহূর্তে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তোষণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সরকার হিন্দুদের ক্রমাগত ক্ষতি করে যাচ্ছেন। আর তার বিরুদ্ধে হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন বুঝেই এখন এই সমস্ত নাটক করার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সাধু-সন্তদের নিয়ে একুশে জুলাইয়ের প্রচার করে তৃণমূল নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার যতই চেষ্টা করুক, এতে লাভের লাভ কিছু হবে না। আর যাদেরকে সাধু হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে, তারা আবার কেউ জালি নয় তো? আসলে এই রাজ্যে যারা প্রকৃত হিন্দু, যারা তৃণমূলের অত্যাচার দেখছেন, যারা তোষনের রাজনীতি দেখছেন, তারা কেউ তৃণমূলের কোনো কর্মসূচিতে শামিল হবেন না বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা অত্যন্ত সত্যি কথা যে, এই রাজ্যে হিন্দুরা ক্রমশ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এবং তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হচ্ছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যেভাবে হিন্দুদের একত্রিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে যথেষ্ট চাপে রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল খুব ভালো মতই অনুভব করতে পারছেন যে, ২০২৬ এ তাদের কাছে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে এই হিন্দু ভোট। আর সেই কারণেই এখন সামনে একুশে জুলাই, তাই তার আগে রাজ্যের গোটা হিন্দু সনাতনীদের কাছে সাধু-সন্তদের নিয়ে প্রচারে নেমে তৃণমূল এই বার্তা পৌঁছে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, তাদের সঙ্গেই হিন্দুরা রয়েছে বা তারা হিন্দুদের পাশে রয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের এই সমস্ত মেকি হিন্দুত্বে মানুষের মন গলবে না বলেই দাবি রাজনৈতিক সমালোচকদের।