প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার রিপোর্ট- শুরুটা হয়েছিল পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডের পর থেকেই। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে “ছোট ঘটনা” মন্তব্য বেরোনোর পর থেকেই তীব্র বিতর্ক তৈরি হয় গোটা রাজ্য জুড়ে। তারপর একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসলেও, এই রাজ্যের শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীদের মন্তব্য চরম বিতর্কের সৃষ্টি করে। সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে গিয়েছে কসবা গণধর্ষণ কান্ড। যে ঘটনার পর তৃণমূলের মদন মিত্রের মন্তব্য এমনিতেই দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তার মাঝেই এবার একটি অনুষ্ঠান থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেভাবে “ছোট ঘটনা” বলে মন্তব্য করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া, তার ফলে প্রশ্ন উঠছে যে, তিনি কোন ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলতে চাইলেন? বর্তমানে রাজ্য তো অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২৬ হাজার চাকরি যাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রাজ্য অমান্য করছে, সেই অভিযোগ ওঠা থেকে শুরু করে সর্বশেষ ঘটে যাওয়া কসবা গণধর্ষণ কাণ্ড। তাহলে কি দলীয় নেত্রীর দেখানো পথে হেটেই এবার পার্কস্ট্রিটে যেভাবে “ছোট ঘটনা” আখ্যা দেওয়া হয়েছিল, ঠিক একইভাবে কসবা গণধর্ষণ কান্ডকে “ছোট ঘটনা” আখ্যা দিয়ে নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন এই মানস ভূঁইয়া?

জানা গিয়েছে, এদিন চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন এবং প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল আর সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যে সম্প্রতি যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “পহেলগাঁও হামলার অভিযুক্তরা ধরা পড়েনি আর বাংলার দিকে দেখুন ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটলেই গেল গেল রব উঠল ঘটনা তো কত ঘটে, স্ত্রী প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মাতৃস্নেহে প্রতিটি ঘটনা সামলান।” আর মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই তিনি যখন অনুষ্ঠান সেরে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন যে, তিনি কোন ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলতে চাইছেন? রাজ্যে তো সম্প্রতি ঘটে গিয়েছে কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডের মত নৃশংস ঘটনা। তাহলে কি এই ঘটনাকেই তিনি ছোট ঘটনা বলে আখ্যা দিলেন?

সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে সেচমন্ত্রীর যুক্তি, “সবটাই। সামান্য ঘটনা হয়েছে, তা নিয়ে হুড়োহুড়ি হচ্ছে। একটা জিনিস বিচার করবেন, মুখ্যমন্ত্রী কোনো ঘটনা এড়িয়ে গিয়েছেন কিনা! আরজিকরের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা অ্যাকশন নিয়েছেন, তখন সিবিআই তার বাইরে এক ইঞ্চিও এগোতে পারেনি।” আর মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডের কথা হয়ত মন্ত্রী উচ্চারণ করেননি। কিন্তু রাজ্য তো এখন উত্তাল হয়ে রয়েছে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই। সকলে মিলেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। কারণ তৃণমূলের একজন প্রাক্তন ছাত্রনেতা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাই মন্ত্রী যখন রাজ্যে যা হচ্ছে, তাকে “ছোট ঘটনা” বলে আখ্যা দিলেন, তখন বুঝে নিতে হবে যে, তিনি কি বলতে চেয়েছেন! আসলে তৃণমূলের মধ্যে বিন্দুমাত্র মানবিকতা বোধ নেই। তাই সব ঘটনাকেই এরা ছোট ঘটনা বলে আখ্যা দিতে ব্যস্ত বলেই খোঁচা দিচ্ছে বিরোধীরা।