প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট -রাজ্যে একের পর এক যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, তাতে সবকিছু ঠিকঠাক চললে তৃণমূলের আর ক্ষমতায় আসা হচ্ছে না, এটা সকলের কাছেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বারবার করেই তো এমনটা বলা হয়। ২০২১ এর ভোটের আগেও তো মানুষ নিশ্চিত ছিল যে, তৃণমূল এবার ক্ষমতায় আসবে না। কিন্তু তারপরও তারা আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আর এর পেছনে যে বিরোধীদের অপদার্থতাই সবথেকে বেশি দায়ী, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত রাজ্যের সাধারন মানুষ। তবে এবার আর মানুষকে হতাশ করে দিয়ে নয়। বরঞ্চ সত্যি সত্যিই যাতে তৃণমূল আর নবান্নের ক্ষমতায় বসতে না পারে, তার জন্য বড় অস্ত্র বেছে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলকে বিসর্জন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ফর্মুলা প্রয়োগ করতে হবে এবং কিভাবে লড়াই করতে হবে, তা বুঝিয়ে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি যে ফর্মুলা বেঁধে দিয়েছেন, তা যদি সত্যিই বিজেপি কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে করতে পারে, তাহলে যে এই রাজ্যে তৃণমূল বিদায় এবার নিশ্চিত, সেই সম্পর্কে দ্বিমত নেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কিন্তু কি সেই ফর্মুলা?

 

বলা বাহুল্য, বর্তমানে রাজ্য রাজনীতিতে একাধিক বিষয় থাকার পাশাপাশি বিজেপি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ভোটার তালিকায়। কারণ সেখানে রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে অনুপ্রবেশকারীরা এসে বাংলার ভোটার তালিকায় নাম তুলছেন। আর এর ফায়দা নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস বলেই অভিযোগ তাদের। তাই সেই ভোটার তালিকায় গরমিল যদি আটকে দেওয়া যায় এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা যায়, তাহলেই যে তৃণমূলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত গেরুয়া শিবির। আর সেই কারণেই প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ভোটার তালিকায় যে গরমিল, তার দিকে সুতীক্ষ্ণ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

 

এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আর সেখানেই রাজ্যের প্রশাসন নিয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। সুকান্তবাবু বলেন, “তৃণমূল শুধুমাত্র প্রশাসনের জোরেই টিকে রয়েছে। ৫০-৬০ শতাংশ প্রশাসন নিরপেক্ষ হলেই আর বাংলার মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।” তবে এখানেই থেমে ছিলেন না সুকান্ত মজুমদার। বাংলায় অনুপ্রবেশকারীদের নাম যেভাবে ভোটার তালিকায় তোলা হচ্ছে, যেভাবে তাদের সরকারি চাকরির মত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও শাসক দলকে আক্রমণ করেছেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম তোলা আটকানোর জন্য শেষ লড়াই লড়বে বিজেপি। আর এই জায়গায় যদি বিজেপি ঠিকমত তাদের লড়াই দিতে পারে, তাহলেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তন নিশ্চিত বলেই বুঝিয়ে দিলেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলার মানুষ তৃণমূলের শাসনে বিরক্ত, এটা সকলেই বুঝতে পারছেন। কিন্তু তারপরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সংশয় রয়েছে যে, তৃণমূলকে সরিয়ে বিকল্প কোন দল রয়েছে, যাদের ওপর তারা ভরসা করতে পারেন! বিজেপির ওপর সাধারণ মানুষ ভরসা করছেন। কিন্তু কোথাও একটা গিয়ে নির্বাচনের দিন বিজেপি কর্মীরা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। তৃণমূলের সন্ত্রাসের মুখে পড়ে তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে নিজেদের মত করে ভোট লুট করে দিনের শেষে জয়লাভ করছে তৃণমূল। তাই প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে যা যা বলার এবং যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা বিজেপিকেই করতে হবে। আর মানুষ যদি ঠিকমত ভোট দেওয়ার অধিকার পায় এবং বিজেপি কর্মীদের যদি তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন রাস্তায় থাকতে দেখে এবং গণনার দিন পর্যন্ত বিজেপি কর্মীরা যদি তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে ময়দানে টিকে থাকতে পারেন, তাহলেই এই রাজ্যে পরিবর্তন নিশ্চিত। আর সেই বার্তাই দিয়ে সুকান্তবাবু গোটা দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিজেপি কর্মীরা এবং গোটা গেরুয়া শিবির নিজেদের ভালোর কথা মাথায় রেখে বাংলার মানুষের মন বুঝে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর ক্ষেত্রে কতটা পরিশ্রম দিতে পারে এবং ভোটের গণনার দিন পর্যন্ত ভোটবাক্স খোলার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে একসাথে ময়দানে থেকে তারা কতটা চোখে চোখ রেখে লড়াই দিতে পারে, সেদিকেই নজর থাকবে গোটা রাজনৈতিক মহলের।