প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – বর্তমানে গোটা রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার একটাই নাম, তিনি হলেন, বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল। যেভাবে তার ভাইরাল অডিও ক্লিপ নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে, তাতে তার বিরুদ্ধে কবে পদক্ষেপ হবে, কবে তাকে গ্রেফতার করবে পুলিশ, সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধী থেকে শুরু করে রাজ্যের সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই পুলিশের মুখোমুখি হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। এতকিছুর পরেও তার যে বিন্দুমাত্র ভয় নেই, বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই, তা নিয়ে সোচ্চার বিরোধীরা। অনেকে আবার প্রশ্ন তুলছেন যে, শুধুমাত্র অনুব্রত মণ্ডলের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়েই কেন চুপ করে গেল তৃণমূল? কেন তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দল থেকে বের করে দেওয়ার মত সাহস দেখাতে পারছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আর এই পরিস্থিতিতে অনুব্রত মণ্ডল যে বীরভূমের কোর কমিটিতে রয়েছেন, সেই গোটা কোর কমিটিকে কলকাতায় ডেকে পাঠালেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
স্বাভাবিকভাবেই এমনিতেই অডিও ক্লিপ কাণ্ডে অস্বস্তিতে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল, তার মধ্যে কলকাতায় বীরভূম জেলার গোটা কোর কমিটিকে ডেকে পাঠানোর কারণ কি, তা নিয়ে নানা মহলে চলছে গুঞ্জন।
জানা গিয়েছে, অন্যান্য জেলার মতই বীরভূম জেলায় কোর কমিটির ৯ জন সদস্যকে আগামী ১৪ জুন তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। কিন্তু হঠাৎ করে এই ডাক কেন? যে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, সামনেই তৃণমূলের সবথেকে বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি ২১ জুলাই রয়েছে। আর তার জন্যেই যে প্রস্তুতি, সেই প্রস্তুতির কারণেই বীরভূম জেলায় যেহেতু সভাপতি নেই, কোর কমিটি করে রাখা হয়েছে, তাই কোর কমিটির চেয়ারম্যান সহ যে ৯ জন সদস্য রয়েছেন কমিটিতে, তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন সেই অনুব্রত মণ্ডলও। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, অনুব্রতবাবু কি দলের এই বৈঠকে যাবেন? কারণ তাকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে তিনি বৈঠকে গেলে যে তাকে দলের বকুনি শুনতে হবে না, এই আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে অনেকে আবার বলছেন, অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেও যেভাবে অনুব্রত মণ্ডল পুলিশের কাছে হাজিরা না দিয়ে পার্টি অফিসে গিয়ে বসেছিলেন, তাতেই স্পষ্ট যে, তার লাজ, লজ্জা বলতে কিছু নেই। তাই দলের এই বৈঠকেও তিনি যাবেন। আর তৃণমূলে শুধু অনুব্রত মণ্ডল নয়, সকলের এই একই ধরনের কালচার এবং তারা এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
বিরোধীদের এটাও বক্তব্য, তৃণমূলের যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকত, তাহলে তারা ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই অনুব্রত মণ্ডলের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কোনো আশা করতেন না। বরঞ্চ নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দিতেন যে, অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দিচ্ছে দল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালো করেই জানেন, তার প্রিয় কেষ্ঠর সঙ্গে তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবেন না। তাই এত বড় জঘন্য অপরাধ করার পরেও অনুব্রত মণ্ডলকে গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল। আসলে বাইরে যতই তারা নিন্দা করুক, ভেতরে ভেতরে অনুব্রত মণ্ডলের কথাই হচ্ছে তৃণমূলের কথা। তৃণমূলের প্রত্যেকটা নেতাই পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে এইরুপ আচরণ করেন বলেই দাবি বিরোধীদের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল একুশে জুলাইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে এই সভা ডাকছে। তবে বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে যে বিতর্ক গ্রাস করেছে, যেভাবে অনুব্রত মণ্ডলের এই একটা ঘটনার জন্য গোটা রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের ভাবভূর্তি নষ্ট হয়েছে, তাতে তৃণমূল চাইলেই অনুব্রত মণ্ডলকে এই বৈঠকে শামিল না হওয়ার নির্দেশ দিতেই পারত। কিন্তু এরকম কোনো নির্দেশিকা তৃণমূলের পক্ষ থেকে গিয়েছে বলে জানা নেই। বরঞ্চ অনুব্রত মণ্ডল সহ যে ৯ জন কোর কমিটির সদস্য রয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, তৃণমূল এখনও অনুব্রত মণ্ডলকে গুরুত্ব দিয়েই চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়কে হাতিয়ার করে বিরোধীরা যে শাসকের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।