প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কিছু নির্দেশিকা ঘিরে রীতিমত ঘুম উড়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের। সোচ্চার হতে দেখা যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। আর তারপরেই তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল দিল্লিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে তাদের দাবি-দাওয়া জানিয়েছে। তবে সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে যে, বাংলায় নির্বাচন নিয়ে প্রতিমুহূর্তে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠে। এমনকি বর্তমানে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে গোটা বাংলায় ভুয়ো ভোটারে ছেয়ে গিয়েছে বলেই অভিযোগ করছে বিরোধীরা। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিতেই কি ভুয়া ভোটারের রমরমা বন্ধ হবে বুঝেই বায়নাক্কা শুরু হয়ে গেল তৃণমূলের? কমিশনে গিয়ে তৃণমূলের নানা দাবি দাওয়া শোনার পর অন্তত তেমনটাই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।

জানা গিয়েছে, গতকাল দিল্লিতে কমিশনের সদর দপ্তরে পৌঁছে যায় তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। যেখানে ছিলেন কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশ চিক বরাইক এবং রাজ্যের মন্ত্রী ববি হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাস। আর সেখানেই কমিশনের কাছে বেশ কিছু দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস বলেই খবর। তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করেই কাজ করা উচিত। শুধু তাই নয়, যোগ্য ভোটারদের যাতে বাদ দেওয়া না হয়, তার জন্যেও দাবি করেছে তৃণমূল। আর এখানেই বিরোধীদের প্রশ্ন, তৃণমূলের কাছে যোগ্য ভোটার কারা? যারা ভুয়ো ভোটার, যারা রোহিঙ্গা, যারা বাংলাদেশী তাদেরকে এই রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় তৃণমূল। আর তারাই কি তাদের কাছে যোগ্য ভোটার? তাই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় সংশোধনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশিকা জারি করতেই অস্থির হয়ে উঠছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ এই অযোগ্য ভোটার, যাদেরকে তৃণমূল যোগ্য বলে সম্বোধিত করছে, তাদেরকে যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়, তাহলে তো তৃণমূল ভোটে জিতবে না! আর সেই কারণেই কি এখন তাদের বিভিন্ন বায়না শুরু হয়ে গেল?

জানা গিয়েছে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধি দল কমিশনের দপ্তরে গিয়েছিল, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি যাতে রাজ্য পুলিশকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় ভোটের কাজে, সেই বিষয়টি নিয়ে দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ববি হাকিম। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি। আর এখানেই প্রশ্ন যে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তো এই রাজ্যে ঠিকমত কাজেই লাগানো হয় না। আর সেই জন্যই তো রাজ্য পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বুথের ভেতরে নিজেদের ইচ্ছেমতো গায়ের জোরে ভোট করিয়ে নেয় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। বারবার সেই অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। সেক্ষেত্রে ২৬ এর নির্বাচন অন্যরকম হবে বুঝেই মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বুঝেই কি এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশকেও যাতে কাজে লাগানো যায়, তার জন্য কমিশনের কাছে মরিয়া হয়ে আবেদন করতে শুরু করলেন ববি হাকিমরা? তবে এখানেই শেষ নয়, রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূলের এই ছটফটানি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপে তাদের ঘুম উড়েছে। তা না হলে ২৬ এর নির্বাচনের এখনও বেশ কয়েক মাস দেরি আছে। যে তৃণমূল বড়াই করে বলে যে, তারা সব কাজ করে দিয়েছে, তাদের পক্ষেই রাজ্যের মানুষ আছে, বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেই তৃণমূলের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় এত ভয় কেন? আসলে তারা বুঝতে পারছে যে, নির্বাচন কমিশন যে সমস্ত পদক্ষেপ করছে, সেক্ষেত্রে রাজ্যে যে সমস্ত ভুয়ো ভোটাররা রয়েছে, তাদের নাম বাদ যেতে পারে। আর তাদের নাম বাদ গেলে যে তৃণমূলের ক্ষমতায় টিকে থাকা কোনোমতেই সম্ভব নয়, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। আর সেই কারণেই সেরকম কিছু যাতে না হয়, যাতে নির্বাচন নিয়েও প্রহসন হয় এবং সর্বোপরি তারা যাতে অবৈধ উপায় হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে, তার জন্যই তড়িঘড়ি কমিশনে গিয়ে বিভিন্ন বায়নাক্কা শুরু করে দিলো তৃণমূল নেতৃত্ব বলেই মত রাজনৈতিক সমালোচকদের।