প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- এই রাজ্যে পুলিশ এবং তৃণমূল যে সমর্থক, দীর্ঘদিন ধরে সেই দাবি করছে বিরোধীরা। অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিও ক্লিপ নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য, ঠিক তখনই পুলিশ কেন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করছে না, এই প্রশ্ন সকলের মধ্যেই রয়েছে। তবে এতদিন দেখা যেত যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যদি তৃণমূলের কোনো নেতাকে ডাকত, তাহলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তেন। যেভাবেই হোক, জেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোনো এক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতেন। কিন্তু এবার যে পুলিশ, বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী তৃণমূলের দলদাস বলে পরিচিত, সেই পুলিশ জেরা করার জন্য ডাকার পরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন বীরভূমের এক সময়কার বাঘ বলে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডল। যার ফলে বড় প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

বলা বাহুল্য, অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিও ক্লিপ ঘিরে যখন বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে, তখন পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে গোটা রাজ্যের মানুষের মধ্যে। তাদের একটাই প্রশ্ন যে, পুলিশের একজন কর্তাকে এইভাবে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করলেন অনুব্রত মণ্ডল, তারপরেও কি করে তিনি বাইরে থাকেন? এখন আবার সেই অনুব্রত মণ্ডল মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্রামের কথা বলছেন। আর তাতেই বিরোধীদের প্রশ্ন যে, পুলিশ তো তৃণমূলের দলদাস, তাদের তো যেটা বলা হবে, তারা সেটাই করবে। সেক্ষেত্রে আবার এই ধরনের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিতে গেলেন কেন অনুব্রত মণ্ডল? তিনি বাড়িতে বসে থাকলেও তো এই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার মত সাহস দেখাতে পারবে না। কারণ তাদের সেই মেরুদন্ড নেই। তাহলে কি ধীরে ধীরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে সরে যাচ্ছে এই রাজ্যের পুলিশ? তারা হাওয়া বুঝতে পারছে, ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের? সেই জন্যই কি পুলিশকে মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য হলেন বীরভূমের বাঘ?

এদিন এই ব্যাপারে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এটা বুঝতে পারছি যে, অনুব্রত মণ্ডল বা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা আগে সিবিআই ডাকলেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এখন পুলিশ ডাকলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হয়ত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধি দিয়েছেন কলকাতা থেকে, অসুস্থ হয়ে পড়তে হবে। কি কারণ, সেটা তিনিই বলতে পারবেন।” শিবিরের মতে সঠিক কথাই বলেছেন সুকান্ত মজুমদার। গেরুয়া শিবিরের মতে, একসময় সিবিআই, ইডি ডাকলেই এই তৃণমূলের নেতারা অসুস্থ হয়ে পড়তেন। কারণ তারা জানেন যে, তারা কুকীর্তি করেছেন। আর সেখানে গেলেই তারা বিপদের মুখে পড়বেন। কিন্তু এবার যে পুলিশ তাদের সব থেকে বড় আশ্রয়দাতা, সেই পুলিশের জেরাতে না গিয়ে অনুব্রত মণ্ডল হঠাৎ মেডিকেল সার্টিফিকেট দিলেন কেন? তাহলে কি পুলিশের থেকেও এখন ভয় শুরু হয়েছে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে?

পর্যবেক্ষকদের মতে, বিষয়টা তেমন নয়। পুলিশ যদি তৃণমূলের দলদাস হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারত, তাহলে এতদিনে অনুব্রত মণ্ডল জেলে থাকতেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আসলে অনুব্রত মণ্ডলকে এটা বলা হয়েছে যে, তিনি যেন মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে দেন। কারণ পুলিশ সম্পর্কে একটা বাজে ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে গোটা রাজ্য জুড়ে। যেখানে বিরোধীদের কোনো অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ, সেখানে অনুব্রত মণ্ডল সেই পুলিশকে এত কদর্য ভাষায় আক্রমণ করার পরেও, কি করে তিনি ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন? তাই এখন তাকে ছাড় দিতে হবে, তিনি তৃণমূলের বড় নেতা, তাই তার কাছ থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আরও বেশি করে তিনি যাতে নিরাপদে থাকেন, সেই চেষ্টাই পুলিশের পক্ষ থেকে চলছে বলেই দাবি পর্যবেক্ষকদের।