প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার রিপোর্ট- কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পাল্টা অপারেশন সিঁদুর নিয়ে যে জবাব পাকিস্তানকে ভারত দিয়েছে, তাতে পাকিস্তানের কোমর ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও গোটা দেশ যখন অপারেশন সিঁদুরের প্রশংসা করছে, তখন এই রাজ্যের কিছু তৃণমূল নেতা এই সাফল্যকে মেনে নিতে পারছেন না। কারণ তাদের তো রাজনীতি করতে হবে! আর সেই রাজনীতি করতে গিয়ে তারা নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা এমনভাবে করছেন, এমন সমস্ত কথাবার্তা বলছেন, যাতে তাদের পাকিস্তানের প্রতি দরদ যেন উথলে উঠছে। আর সেটাই সবথেকে বেশি বিড়ম্বনার কারণ হচ্ছে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। তার দলের নেতা-মন্ত্রীরা নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে যে সমস্ত উক্তি এবং যে সমস্ত মন্তব্য করছেন, তাতে স্বস্তি পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টে আরও চাপ বাড়ছে বাংলার প্রশাসনিক প্রধানের। এবার ববি হাকিম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী, তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তারপর তাকে রীতিমত চেপে ধরে বেকায়দায় ফেলে দিলো বিজেপি।

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারত- পাকিস্তানের যে সংঘর্ষ বিরতি, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন ববি হাকিম। তিনি বলেন, “একটা বড় দেশের ভয়ে কাপুরুষের মত সেনাবাহিনীকে থামানো হয়েছে।” আর ববি হাকিমের এই মন্তব্য নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, বড় দেশ বলতে তিনি কাকে বোঝাতে চাইছেন? পাকিস্তান তার কাছে কি করে বড় দেশ হতে পারে? যে পাকিস্তানকে একটু টাইট দিতেই তাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে ভারত, সেখানে পাকিস্তানকে বড় দেশ বলে কি ভারতকেই ছোট করলেন না পশ্চিমবঙ্গের এই মন্ত্রী?

তবে অনেকে আবার বলছেন, ববি হাকিমের পাকিস্তান প্রিতী তো নতুন কিছু নয়। এর আগেও তার বিভিন্ন বক্তব্য সামনে এসেছে। দাওয়াত ই ইসলামের কথা বলার পাশাপাশি মিনি পাকিস্তানের কথা বলে তো তিনি বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন। ফলে পাকিস্তানকে ভারত জবাব দিয়েছে এটা হয়ত মনে মনে মেনে নিতে পারছেন না রাজ্যের এই মন্ত্রী। সেই কারণেই কি তিনি পাকিস্তানকে বড় দেশ বলে অভিহিত করার চেষ্টা করলেন?

এদিন গোটা বিষয়ে ববি হাকিমকে রীতিমত তুলোধোনা করেন বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ। তিনি বলেন, “ফিরহাদ হাকিম সাহেব পাকিস্তানকে যে বড় দেশ হিসেবে দেখছেন, কোথায় বড়? কিসে বড়? যেখানে সমস্ত ভারতবাসী মিছিল করে ভারতীয় সেনার জয়জয়কার করছে, এখানকার প্রতিনিধি দল বিদেশে গিয়ে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বোঝাচ্ছে, সেখানে একজন কলকাতার প্রেমে গদগদ হয়ে বলছেন, বড় দেশ তো, প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। তিনি নাকি ভয় পেয়ে সংঘর্ষ বিরতি করেছেন! আমরা এই মন্তব্যের জন্য তীব্র বিরোধিতা করছি। তিনি কিসের জন্য দুঃখ পেয়েছেন?”

একইভাবে ববি হাকিমকে কটাক্ষ করে ভারতী দেবী আরও বলেন, “আজ কলকাতার প্রথম নাগরিক হটাৎ পাকিস্তান প্রেমী হয়ে উঠেছেন, তা নয়। আগেও ডন পত্রিকার সাংবাদিককে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র দেখিয়ে বলেছিলেন, এটি মিনি পাকিস্তানের মত। শুধু তাই নয়, ইসলামে জন্মগ্রহণ না করলে তা দুর্ভাগ্য বলেছিলেন। আপনার দলনেত্রী কিন্তু ইসলামে জন্মগ্রহণ করেননি, আপনি কি জানেন? ভারতের বায়ু সেনা মাত্র ২৫ মিনিটে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। সারা বিশ্ব থমকে দাঁড়িয়ে দেখেছে, ভারতের এই অসামান্য জয়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় দেশের ভয়ে কাপুরুষের মত সেনাবাহিনীকে থামানো হয়েছে, এ কথা ববি হাকিম বলেছেন, এটা অত্যন্ত ঠিক। কিন্তু তিনি বড় দেশ হিসেবে কাকে সম্বোধন করেছেন? এর ব্যাখ্যা তাকেই দিতে হবে। মাঝখান থেকে বিজেপি যেভাবে গোটা বিষয় নিয়ে আবার ববি হাকিমের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়লো, তাতে কিন্তু ববি হাকিমের অস্বস্তি বৃদ্ধির থেকেও চরম বিপাকে পড়ে গেলেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বারবার একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তোষণ করার অভিযোগ উঠছে এই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই নিয়ে যখন সকলেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন, তখন বড় দেশের ভয়ে যুদ্ধ থামানো হয়েছে বলে কি পাকিস্তানকেই ভারতের থেকে ওপরে দেখানোর চেষ্টা করলেন ববি হাকিম? যদি তিনি তাই বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাহলে কিন্তু জনতার প্রতিরোধের করুন ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে হাকিম সাহেব এবং তার গোটা দলকে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।