প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
তৃণমূল কোনো সাংগঠনিক রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা লিমিটেড কোম্পানি। মাঝেমধ্যেই এই আক্রমণ করতে দেখা যায় বিরোধীদের। মূলত, কোনো দলে যখন কাউকে কোনো সাংগঠনিক দায়িত্বে বসানো হয়, তখন তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েই তাকে সেই দায়িত্বে বসানো হয়। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলে তেমনই রেওয়াজ দেখা যায়। কখনও দেখা যায় না যে, দায়িত্বে বসানোর সাথে সাথেই তাকে আবার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী, লিমিটেড কোম্পানিতে সব কিছুই হয়। আর এবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে ঘটা করে দলের ফেসবুক পেজ থেকে এক জেলার যুব সভাপতি হিসেবে একজনের নাম ঘোষণা করলেও, নয় দিনের মাথাতেই তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে বসানো হলো দায়িত্বে। আর শাসক দলের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে এখন দলের মধ্যেই উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন।

বলা বাহুল্য, গত মাসের ২১ তারিখে গোটা রাজ্য জুড়েই তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার যুব, মহিলা এবং শ্রমিক সংগঠনের রদবদন করা হয়। বিভিন্ন জেলায় যুব সংগঠনের সভাপতি এবং দুইজন সহ-সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে ছিল হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলাও। যেখানে যুব সভাপতি হিসেবে অরিজিৎ ব্যানার্জি এবং সহ সভাপতি হিসেবে প্রিয়াঙ্কা অধিকারীর নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সোমবার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নিজেদের ফেসবুক পেজে জানিয়ে দেয় তৃণমূল নেতৃত্ব। আর তাতেই আশ্চর্য হয়ে যান দলের নেতা কর্মীরা।

জানা গিয়েছে, সোমবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাদের দলের ফেসবুক পেজ থেকে একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেখানে হুগলী শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি পদে বসানো হয় ৯ দিন আগে ঘোষণা করা সহ-সভাপতি প্রিয়াঙ্কা অধিকারীকে। অন্যদিকে এতদিন যাকে যুব সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই অরিজিৎ ব্যানার্জিকে রাজ্যের যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করার কথাও সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দেয় তৃণমূল নেতৃত্ব। আর এখানেই প্রশ্ন যে, হঠাৎ করে এমন কি হলো, যার কারণে ৯ দিন পরেই সংগঠনে এই রদবদল করতে হলো তৃণমূলকে? এর ফলে এমনিতেই তো তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, তার মধ্যে আগেভাগে যদি প্রথমেই একটা দল সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে হয়ত পরবর্তীতে সেই ক্ষোভকে সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু একবার সংগঠনিক সভাপতি হিসেবে একজনের নাম ঘোষণা করে ৯ দিন পরে আবার তাকে পরিবর্তন করে অন্যজনের নাম সেখানে নিযুক্ত করে দিয়ে তৃণমূল নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনলো বলেই দাবি করছেন একাংশ।

তবে দলের অন্দরমহল থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এখানেও যে নেতার পাল্লা ভারী, সেই নেতার অনুগামীকেই সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন অনেকে। কেননা প্রথমে যে অরিজিৎ ব্যানার্জিকে যুব সভাপতি করা হয়েছিল, তিনি বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই খবর। আর যাকে সহ-সভাপতি করা হয়েছিল, সেই প্রিয়াঙ্কা অধিকারী তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। তাই কল্যাণবাবুর পাল্লা ভারী, আর সেই কারণেই তাকে না চটাতেই তার ঘনিষ্ঠ প্রথমে সহ-সভাপতি থাকা পিয়াংকা অধিকারীকে পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল বলেই খোঁচা দিচ্ছেন বিরোধীরা।

অন্যদিকে যিনি সহ-সভাপতি ছিলেন, তাকে হঠাৎ করে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হলো কেন? এই প্রসঙ্গে সেই প্রিয়াঙ্কা অধিকারী বলেন, “দল দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করব। শিক্ষিত ভালো ছেলেমেয়েদের দলে আনার চেষ্টা করব। যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করবে। কেন সভাপতি নয় দিনের মধ্যে বদল হয়েছে, এটা একেবারেই দলের সিদ্ধান্ত।”