প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- প্রত্যেকটি সময় তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, তিনিই নাকি বঙ্গ বিজেপির সফলতম সভাপতি। এই নিয়ে তার এবং তার অনুগামীদের ফুটানির কমতি ছিল না। পিছুটান নেই, সংগঠনের কাজ না করতে দিলে চলে যাব, এরকম অনেক কথা শোনা গিয়েছিল দিলীপ ঘোষের গলায়। কিন্তু কিছুদিন আগে দীঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে তিনি সরাসরি সেখানে চলে যাওয়ার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, তিনি কি তৃণমূলের হাতে হাতিয়ার তুলে দিতে চাইছেন?

তারপর ধীরে ধীরে তার সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আর বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসেছে যে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরবঙ্গে সভা করতে আসলেও সেখানে ডাক পাননি দিলীপ ঘোষ। আর এবার আজ যখন রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ, ঠিক তখনই তার বাংলায় পা রাখার আগে আরও একটি বড় ধাক্কা খেলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। যার ফলে প্রমাণ হয়ে গেল যে, তাকে আর বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেউই তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

বলা বাহুল্য, আজই রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাতে যে হোটেলে থাকবেন তিনি, তার কিছুটা দূরেই রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাসভবন। ইতিমধ্যেই অমিত শাহের সফরকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে গেরুয়া শিবির তবে। কিন্তু কোনো প্রস্তুতিতেই দিলীপ ঘোষকে সেভাবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি তাকে ডাকাই হয়নি? মোদীর সভার পর কেন অমিত শাহের বাংলায় পদার্পণের সময়ও তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না? তাহলে কি একদম ছেটে ফেলা হচ্ছে দিলীপবাবুকে? বঙ্গ বিজেপির কাছে কি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, দিলীপ ঘোষ দলকে চাপে ফেলে তলায় তলায় অন্য কোনো শিবিরের সঙ্গে আঁতাত রাখছেন?

এদিন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করেন যে, অমিত শাহ আসছেন। আপনি কি সেখানে যাবেন না? আপনাকে কি আদৌ ডাকা হয়েছে? আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “না, বড় নেতারা না ডাকলে আমি যাই না। বড় নেতাদের মান সম্মান আছে। তারা যাদের ডাকেন, তারা যায়। আমি প্রয়োজনে যাই। আমার প্রয়োজন হয় না। নিজে সংগঠনের কাজ করি, প্রয়োজন পড়লে তারা ডাকেন। কি করতে হবে বলেন। আমরা তা পালন করি মাত্র। আগে গিয়েছিলাম। যখন সভাপতি ছিলাম। এখন অন্যরা দায়িত্ব সামলাচ্ছে। আমরা কার্যকর্তার বৈঠকে থাকব।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিলীপ ঘোষ এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, তিনি এখন কোনো দায়িত্ব নেই, তাই তাকে ডাকা হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব কি সত্যিই এতটাই সরল? কারণ, কিছুদিন আগে পর্যন্ত দিলীপ ঘোষ কোনো দায়িত্ব ছিলেন না। তিনি রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদ থেকে সরে যাওয়ার পরেও তো এই রাজ্যে মোদী থেকে শুরু করে অমিত শাহর মত হাইপ্রোফাইল নেতারা এসেছেন। সেখানে তো দিলীপ ঘোষ ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন কি হলো যে, এখন দিলীপ ঘোষকে ডাকাই হচ্ছে না?

আসলে দিলীপবাবু নিজেও জানেন, দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে তিনি তৃণমূলের হাতে বাড়তি হাতিয়ার তুলে দিয়েছেন। আর বঙ্গ বিজেপি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বিজেপি, সবাই চাইছে, তৃণমূলকে রাজ্য থেকে সরাতে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের যিনি সুবিধা করে দিয়েছেন, তার সঙ্গে যে গেরুয়া শিবির মোটেই ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে রাজি নয়, তা একের পর এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এতদিন ধরে বড় বড় গলায় আওয়াজ দেওয়া, ফুটানি দেখানো দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্রমশ প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।