প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
সত্যিই কি তৃণমূলে মানবিকতা বোধটুকুও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে? যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় গরিবের নেত্রী, আম আদমির নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এখন আমূল বদলে গিয়েছেন? বিজয়ের আনন্দে ভাসতে ভাসতে কি মানবিকতা বোধটুকুও ভুলে গিয়েছেন তিনি? বিরোধীদের তরফে এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জয়লাভ করতেই যেভাবে তৃণমূলের মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয়েছে এবং তার ফলে ১০ বছরের শিশু কন্যার মৃত্যু হয়েছে, তার ফলে গোটা রাজ্যবাসী শোকস্তব্ধ। আর যাদের বিন্দুমাত্র মানবিকতা বোধ থাকবে, তারা এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুঃখ প্রকাশ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়েই এবার দলের রোষের মুখে পড়লেন কালীগঞ্জ বিধানসভার নবনির্বাচিত বিধায়ক আলিফা আহমেদ। যা নিয়েই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন যে, সত্যিই কি তাহলে এবার তৃণমূলে সত্যি কথা বলার দিন শেষ?
বলা বাহুল্য, কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বিজয় উল্লাস শুরু হয় তৃণমূলের। আর তৃণমূলের সেই বিজয় মিছিল থেকেই এক সিপিএম সমর্থকের বাড়ি লক্ষ করে বোমা ছোড়া হলে সেখানে ১০ বছরের শিশু কন্যা তামান্না খাতুনের মৃত্যু হয়। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই রীতিমত রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের বিজয় উল্লাসের কারণে কেন একজন শিশু কন্যার প্রাণ যাবে, তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন কালীগঞ্জের নবনির্বাচিত বিধায়ক আলিফা আহমেদ। যেখানে তিনি লেখেন, “আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। দোষীদের যেন দল, বর্ণ নির্বিশেষে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়।”
তবে তৃণমূল বিধায়কের মধ্যে কিছুটা হলেও মানবিকতা আছে জন্যই তিনি হয়ত এই ধরনের পোস্ট করেছেন। কিন্তু সেটা সহ্য হয়নি তার দলের। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিধানসভায় নদীয়া জেলার তৃণমূল বিধায়কদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই আলিফা আহমেদকে এই বিষয়ে যাতে তিনি আর কোনো কিছু না বলেন, তার জন্য তাকে চুপ থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সত্যিই এই বিধায়ককে এই ঘটনার কারণে বা এই ধরনের পোস্ট করার কারণে চুপ থাকার বার্তা দেন, তাহলে কি সত্যি সেটা মেনে নেওয়া যায়? তাহলে কি মানবিকতা বোধটুকু থাকবে না তৃণমূলের কোনো নেতার মধ্যে? এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, কোথায় প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কিন্তু তা না করে নিজের দলের বিধায়ক এই মর্মান্তিক ঘটনায় মুখ খুলেছেন জন্য তাকেই চুপ করিয়ে দিলেন তিনি?
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলে এখন মানবিকতা বোধ বলতে কিছু নেই। যারা চুরি, দুর্নীতি করবে, যারা বিরোধীদের ওপর অত্যাচার করবে, তারাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় পাত্র হিসেবে থাকবেন। আলিফা আহমেদ গোটা ঘটনায় মুখ খুলে আরও বিপদে পড়েছেন। আসলে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয়েছে জন্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সেটাকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন। তাই দলীয় বিধায়ক সেই ঘটনায় মুখ খোলার কারণে তাকেই সতর্ক করে দিয়ে তিনি যাতে আর কিছু না বলেন, তার জন্য বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। আসলে তৃণমূল যে ক্রমশ জনবিরোধী দলে পরিণত হচ্ছে, তা একের পর এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার। পাশাপাশি আরও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, তৃণমূল করলে কেউ সত্যি কথা বলতে পারবেন না বলেই দাবি বিরোধীদের।