প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে গেলে সংখ্যালঘু ভোটের ওপর ভরসা করলে চলবে না। কারণ সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে ভোট দেবে না, এটা খুব ভালো মতই বুঝতে পেরেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।‌ সেই কারণে প্রত্যেকটি সভা, সমিতিতে সংখ্যালঘুদের ভোটের ওপর ভরসা না করে বেশি করে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন তিনি। যেখানেই হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানেই পৌঁছে যাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তবে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন ছিল যে, শুভেন্দু অধিকারীর এই শুধুমাত্র হিন্দুদের পক্ষ অবলম্বন করে রাজনীতি করা কি বিজেপিকে সাফল্য এনে দিতে পারবে? যদি মুসলিমদের ভোট বিজেপি একটিও না পায়, তাহলে কি শুধু হিন্দুদের ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল করার স্বপ্ন পূরণ হবে গেরুয়া শিবিরের? নতুন সভাপতি হিসেবে শমীক ভট্টাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর কি শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষেই কথা বলবেন! নাকি তিনি বিরোধী দলনেতার বিপক্ষে গিয়ে সমস্ত সম্প্রদায়ের ভোট নেওয়ার চেষ্টা করবেন? এসবের মধ্যেই রাজ্যের নয়া বিজেপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই শমীক ভট্টাচার্যের একটি মন্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন যে, শুভেন্দু অধিকারী যেখানে শুধুমাত্র হিন্দুদের ভোট চাইছেন, সেখানে হিন্দু, মুসলিম সকলেরই ভোটের ওপর ভরসা করছেন নয়া বিজেপি সভাপতি। আর এখানেই দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বলে তৃণমূল কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। তবে এবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যে তিনি একমত, তা বুঝিয়ে দিলেন শমীক ভট্টাচার্য।

এদিন এই প্রসঙ্গে শমীকবাবুকে একটি প্রশ্ন করা হয়। যার উত্তরে তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন, আমিও কাল সেই কথাই বলেছি। শব্দচয়ন এবং শরীরে ভাষা একান্তই বক্তার ব্যক্তিগত। শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু ভোট এককাট্টা করার কথা বলেছেন। আর আমি বলেছি, যদি মুসলিমরা ভেবে থাকেন, তাদের ভোট ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন করা যাবে না, তৃণমূলের বিসর্জন হবে না, তাহলে তারা ভুল ভাবছেন। আমাদের ভোট দেওয়ার দরকার নেই, তাও বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। সেটাই শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন।” নয়া বিজেপির সভাপতি আরও বলেন, “আমি শুভেন্দু অধিকারীর শব্দের সঙ্গে শুধু শব্দ জুড়ে বলেছি, আপনারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন, ১৪ বছর আগে আপনারা কোথায় ছিলেন, আজ কোথায় আছেন! আপনারা গুজরাটের মুসলিমদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি, আর আপনাদের অবস্থা দেখুন।”

একাংশ বলছেন, শমীক ভট্টাচার্যকে সভাপতি করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শুভেন্দু অধিকারীর ওপরেই বাংলাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তৃণমূল এখন বিজেপির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করতে রাজ্য সভাপতি এক কথা বলছে, বিরোধী দলনেতা আরেক কথা বলছে, এমনটা বলতেই পারেন। কিন্তু বিজেপির স্ট্যান্ড যে অত্যন্ত ক্লিয়ার, তা স্পষ্ট করে দিলেন নয়া সভাপতি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন যে, শুভেন্দু অধিকারী এবং তার কথা একই। এক্ষেত্রে শরীরী ভাষা এবং শব্দচয়ন আলাদা থাকলেও, তারা দুজনে একই বিষয় বোঝাতে চেয়েছেন এবং এক্ষেত্রে মুসলিমরা তাদেরকে ভোট না দিলেও, তারা যে ক্ষমতায় আসতে চলেছেন এবং বাংলায় ক্ষমতায় আসাই যে তাদের এখন প্রধান লক্ষ্য, তা স্পষ্ট হয়ে গেল শমীকবাবুর মন্তব্যে। আর এসবের মধ্যে দিয়েই আরও একটা বিষয় স্পষ্ট যে, শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে বিজেপির উত্থান চাইছিলেন, নয়া সভাপতি হয়ে শমীকও সেই পথই বেছে নিলেন। যার ফলে এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইতে শমীক এবং শুভেন্দু, এই দুই ফলায় জর্জরিত হয়ে যাবে ঘাসফুল শিবির বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।