প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
বারবার করে এই রাজ্যের বিরোধীরা অভিযোগ করেছে যে, তৃণমূল কংগ্রেস একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তোষণ করে। যার ফলে মালদহ থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, মহেশতলার মত জায়গায় হিন্দুরা আজ বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। সংখ্যালঘুদের তোষণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতি করছেন বলেও প্রতিনিয়ত অভিযোগ করতে দেখা যায় বিজেপিকে। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা হয় যে, তারা সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করে। কিন্তু তৃণমূলের সর্বধর্ম সমন্বয়ের এটাই কি আসল রূপ, যা প্রকাশ্যে বলে দলকেই রীতিমত বিড়ম্বনার মুখে ফেলে দিলেন দাপুটে বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র? যে কথা তিনি বললেন, তারপর প্রশ্ন উঠছে যে, এই কারণেই কি তৃণমূল এবং তাদের নেতারা হিন্দুদের সহ্য করতে পারেন না? মুসলিম তোষনই একমাত্র তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে? কি ঘটনা ঘটেছে? কি বলেছেন তৃণমূলের মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র?
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের মালদহ জেলার পক্ষ থেকে ২১ জুলাইকে নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। আর সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের হিন্দুবিদ্বেষী মনোভাবকে সামনে আনেন তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “বিজেপি রামের নামে ভোট চাইছে। জয় শ্রীরাম বলতে পারলে জয় জগন্নাথ কেন বলতে পারব না? রাম আর জগন্নাথ কি আলাদা? আমাদের সব থেকে পছন্দ ইসলাম ধর্ম। মুসলিমরা আন্দোলন করে না। কিন্তু হিন্দুরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। আমাদের কোথাও তো গীতা, ভাগবত পড়ানো হয় না। কিন্তু মুসলিমদের আরবি শেখার, কোরান পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। হিন্দুত্বের নামে বিজেপি ভোট পাবে না।” আর একজন বিধায়ক তাও আবার শাসক দলের, তিনি যেভাবে নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব স্থাপন করলেন, তার ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূল যে ক্রমাগত হিন্দু বিদ্বেষী হয়ে উঠছে, তা নিয়ে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না রাজ্যের বিরোধী শিবির বিজেপি।
ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়ে সাবিত্রী মিত্রর বক্তব্যের ভিডিওকে পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। যেখানে তিনি লেখেন, “আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম। মুসলমানরা প্রতিবাদ করে না। কিন্তু হিন্দুরা ধর্মের ওপর রাজনীতি করছে। আমাদের কোথাও ভগবত গীতা শেখানো হয় না। কিন্তু মুসলমানদের আরবি শেখানো এবং কোরান অধ্যয়নের বিধান রয়েছে… টিএমসি বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র, মানিকচক।
২১ জুলাই টিএমসি সমাবেশের প্রচারণার সময় তৃণমূলের একজন বর্তমান বিধায়ক এভাবেই হিন্দু ধর্মের অপমান করেন। ভগবত গীতাকে উপহাস করা, রাজনীতি করার জন্য হিন্দুদের লক্ষ্যবস্তু করা, এক ধর্মের ওপর অন্য ধর্মের প্রকাশ্যে পক্ষপাত করা, এটি ধর্মনিরপেক্ষতা নয়। এটি প্রাতিষ্ঠানিক হিন্দু বিদ্বেষ। তৃণমূল ২০২৬ সালে হিন্দুদের প্রতি এই নির্মম অপমানের পরিণতি ভোগ করবে। বাংলার মানুষ ভুলবে না।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, এমনিতেই বিজেপি যেভাবে হিন্দুদের একত্রিত করতে শুরু করেছে, তাতে ২০২৬ এর নির্বাচনে হিন্দু ভোট কতটা তৃণমূলের পক্ষে যাবে, এটাই একটা বড় প্রশ্নের বিষয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিরোধীরা দাবি করছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন জগন্নাথ মন্দির তৈরি করে হিন্দুদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দু সনাতনীদের আবেগকে স্পর্শ করে তিনি চাইছেন, হিন্দুদের ভোট যাতে তার পক্ষে আসে। কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সাবিত্রী মিত্রের মত তৃণমূল বিধায়ক যেভাবে হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে পোষণ করলেন, তাতে তৃণমূলের উদ্দেশ্য এবং শুধুমাত্র কেন তারা সংখ্যালঘুদের পছন্দ করেন, তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গেল। আর দলীয় বিধায়কের এই মন্তব্যের ফলেই আগামী দিনে হিন্দুদের ভোট পাওয়া তো দূরের কথা, যে কয়টা হিন্দু তৃণমূলের সঙ্গে ছিল, তারাও সাবিত্রী মিত্রের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই ভোট করবেন বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের।