প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
শুরুটা হয়েছিল একুশে জুলাইয়ের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। যেখানে নিজের বিধানসভায় যাওয়ার সময় একাধিক জায়গায় তৃণমূল কর্মীদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মন্তেশ্বরের বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। এমনকি তাকে মারতে পর্যন্ত উদ্যত হয়েছে দলের একাংশ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে ব্লক সভাপতি থেকে অভিযোগের তীর ছুড়তে দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তিনি সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এরকম করলে তিনি দল ছাড়তেও বাধ্য হবেন। কিন্তু এখানেই যদি সমস্যা থেমে যেত, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর এত বড় হুমকির পরেও, সেই মন্তেশ্বর থেকেই পাল্টা যে আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্ত্রীকে করা হলো, তাতে ক্রমশ জট বাড়ছে তৃণমূলের মধ্যে।
জানা গিয়েছে, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর হুমকির পরেই পাল্টা নেমেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখ। যেখানে রাজ্যের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ব্ল্যাকমেল করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। শুধু তাই নয়, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর নাম করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধা পায় না, বিধায়ককে সঠিক সময় পায় না। তাদের সমস্যার সমাধান হয় না। উনি শুধুমাত্র ব্ল্যাকমেল করছেন। উনি যেখানে যাবেন, সেখানেই জ্বালাবেন।” আর যখন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী হুমকি দিচ্ছেন যে, তিনি দল ছেড়ে দিতে পারেন, তখন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তা নিয়ে চিন্তা পোষণ করলেও, এই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর রাজনীতির কারণে যে স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বরা অত্যন্ত বিরক্ত, তারা যে বিধায়ক তথা মন্ত্রীকে একেবারেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না, তা কিন্তু দলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল এবং এর ফলে স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলেই মনে করছেন একাংশ।
ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, তৃণমূলকে শেষ করার জন্য অন্য কারও প্রয়োজন নেই। তৃণমূলই তৃণমূলকে শেষ করার জন্য যথেষ্ট। দলের মধ্যেই যেভাবে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, যেভাবে মন্ত্রীকেই মানছেন না দলের কর্মীরা, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, তৃণমূলের শেষের সময় চলে এসেছে। সাধারণ মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার জন্য তৈরি। আর আগামী দিনে তৃণমূলকে সরানোর জন্য দলের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অনেক কর্মী সমর্থকরা বিজেপিকে ভোট দেবেন বলেই দাবি করছে গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ মহল।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলেই মনে করা হয়েছিল। কেননা মন্ত্রী যখন হুমকি দিচ্ছেন, তখন কেউ আর সেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলবেন না, এমন একটা ধারণা সকলের মধ্যে গ্রাস করেছিল। কিন্তু দলটার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নূন্যতম শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই বলেই দাবি করে বিরোধীরা। তাই মন্ত্রীর কাজে যে তারা মোটেই সন্তুষ্ট নয়, সেই ব্যাপারে পাল্টা মুখ খুলে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আবার সোচ্চার হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি যে কথা বললেন, তাতে এই মন্তেশ্বর নিয়ে তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ যেমন বাড়লো, ঠিক তেমনই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী দলেরই নেতৃত্বদের প্রশ্নের মুখে পড়ে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।