প্রিয়বন্ধু মিডিয়া – পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একবার সরাসরি আক্রমণ শানালেন বিজেপিকে এবং একই সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনৈতিক কৌশল নিয়েও। মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি, আর পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের নীতির প্রশ্ন তোলেন। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড ও ভারতের প্রত্যাঘাত নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব উত্থাপন হয়। সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকে সম্মান জানালেও, কড়া সমালোচনা করলেন কেন্দ্রের বিদেশনীতি ও কূটনৈতিক অবস্থানের।
পহেলগাঁওতে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সেনা সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে সরকার আরও দৃঢ় হতে পারত। পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) দখলের সুযোগ ছিল, সেটিকে কাজে লাগাতে না পারার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। নিহত সহিস আদিলকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ঘটনা গোটা দেশের জন্য অপমান। যারা নিজের প্রাণ দিয়ে পর্যটকদের বাঁচিয়েছেন, তাঁদের আমরা কুর্নিশ জানাই।” তবে এই মানবিক বক্তব্যের পাশাপাশি রাজনীতির তীরও ছুড়ে দেন তিনি।
বিষয়টি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল পুলওয়ামা প্রসঙ্গ তোলেন। এর জবাবে মমতা বলেন, “আপনি ফ্যাশন নিয়ে কথা বললে শুনব, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে জ্ঞান দেবেন না।” এরপরই বিধানসভায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা নিয়ে আপত্তি তোলেন, অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উত্তরে মমতা বিজেপিকে “অপদার্থ” বলে কটাক্ষ করেন ও বলেন, “এই দল দেশের সর্বনাশ করছে।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই, জাত নেই। পাকিস্তানকে অন্তত একবার শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিল।” মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে স্পষ্ট, তিনি কেন্দ্রের বিদেশনীতি ও প্রতিরক্ষা নীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
মমতার প্রশ্ন, পাকিস্তান যদি আন্তর্জাতিক মহলে এতটাই একঘরে হয়ে পড়ে, তবে IMF কীভাবে তাদের ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিল? এটা কি ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা নয়? তাঁর মতে, ভারতের কূটনীতিতে ফাঁক থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে জঙ্গিরা সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকে এহেন হামলা চালাতে পারল? গোয়েন্দা ব্যবস্থার ঘাটতিও তিনি তুলে ধরেন। সব মিলিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল দুই ফ্রন্টে—একদিকে কেন্দ্রের ব্যর্থতা ও বিজেপির রাজনীতিকে একহাত নেওয়া, আর অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সাহসিকতা ও দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে কঠোর মনোভাব। তাঁর কণ্ঠে একাধারে নীতিগত প্রশ্ন, আবার রাজনৈতিক কৌশলও স্পষ্ট হয়ে উঠল।