প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
দীঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আগে থেকেই তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রথম দিন থেকেই এটা কোনো মন্দির নয়, এটা একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলে দাবি করে এসেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ভাবে তিনি এই যুক্তিও স্থাপন করেছেন যে, সরকার তাদের টাকায় কোনোদিন কোনো মন্দির বা ধর্মীয় পিঠস্থান তৈরি করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সরকার এটা একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করে হিন্দু ধর্মের সঙ্গে অবমাননা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। আগামী কাল রথযাত্রা। আর তার আগে দীঘায় এই জগন্নাথ মন্দিরে প্রথমবার রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। তার জন্য ইতিমধ্যেই সেখানে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে গিয়েছেন। চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। আর তার মধ্যেই আজ সেই দীঘার জগন্নাথ মন্দির তৈরি নিয়ে এবং তার পেছনে যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তা যে একেবারেই অনিয়মে ভরা, সেই রকমই একটি ভয়ংকর তথ্য সামনে এনে হাটে হাড়ি ভেঙে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ করেন, হিডকোর টাকায় এই জগন্নাথ মন্দির যাকে বলা হচ্ছে, যেটা একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সেটা তৈরি হয়েছে। হিডকো নিউটাউনের বাইরে আর কোথাও সেই টাকা ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু এই রাজ্য সরকার কিছুই মানে না। প্রতি মুহূর্তে তারা কোর্টে ধাক্কা খাচ্ছে। আর তারপরে তারা অনিয়ম করে এই টাকা এই কাজে ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে আসানসোলের একটি সংস্থা সেখানকার কাজের বাইরে আর কোথাও টাকা দিতে পারে না, তাদের তথ্য যেমন তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনই এসজেডিএর মত সংস্থার কথাও তুলে ধরেছেন শুভেন্দুবাবু। এই সমস্ত সংস্থার উদাহরণ সামনে এনে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এই সমস্ত সংস্থা যেমন নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে আর কোথাও টাকা খরচ করতে পারে না, ঠিক তেমনি হিডকোর কাজ একমাত্র নিউটাউনের উন্নয়নে অর্থ খরচ করা। কিন্তু সেই টাকা সেখানে খরচ না করে তা জগন্নাথ মন্দিরের তৈরীর কাজে খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

বিজেপির দাবি, সঠিক তথ্যই দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রথম কথা, মন্দির তৈরি করার জন্য কোনোদিন সরকার অর্থ দিতে পারে না। অযোধ্যার রাম মন্দির তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন সনাতনী সংস্কৃতির মানুষদের অর্থনৈতিক সহযোগিতায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং এইখানকার সরকার কোনো আইন মানে না। সরকারি অর্থ দিয়ে তারা মন্দিরের নামে এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করে নিজেদের হিন্দু প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এবার তাদের ভাঁওতাবাজি ধরা পড়ে গিয়েছে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, শুভেন্দু অধিকারী রথযাত্রার আগেই জগন্নাথ মন্দির নিয়ে যে ভয়ংকর তথ্য দিলেন, তাতে বেকায়দায় পড়তে বাধ্য নবান্ন। দীঘায় একটা মন্দির করে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সেখানে রথযাত্রার আগে গিয়ে বিভিন্ন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে হয়ত হিন্দু ভোটকে নিজের দিকে আরও বেশি করে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানে পাল্টা যে কথাটা শুভেন্দু অধিকারী বলে দিলেন, তাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই এখন সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা। কেননা হিডকো, যাদের একমাত্র নিউ টাউনের উন্নয়নের জন্য সেখানে টাকা খরচ করার কথা, সেক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে সেই হিডকোর টাকা খরচ করে কেন দীঘার জগন্নাথ মন্দির হলো, তাহলে তো এটা বড়সড় বেআইনি! তাই বিরোধী দলনেতা এত বড় অভিযোগ করার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেই অভিযোগ খন্ডন করেন, নাকি চুপ করে থাকেন, সেটা অবশ্যই দেখার বিষয়. আর যদি এই মারাত্মক অভিযোগের পরেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীরবতা পালন করেন, তাহলে বড় হিন্দু সাজতে গিয়ে, সনাতনীদের মন জয় করতে গিয়ে চরম প্যাঁচে পড়তে হতে পারে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারকে বলেই দাবি রাজনৈতিক সমালোচকদের।