প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- কিছুদিন আগেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মত দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রথম থেকেই বিজেপি দাবি করছে, এটা কোনো মন্দির নয়, এটা একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আগামী কাল রথযাত্রা। আর তার আগে পুরীতে যেমন রথযাত্রা হয়, ঠিক তেমনই তার পাল্টা দীঘাতে যাতে বড় করে রথযাত্রা করা হয়, তার জন্য সেখানে প্রশাসনকে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব রকম প্রস্তুতি খতিয়ে দেখছেন তিনি। যাকে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। তারা বলছেন, পুরীর সঙ্গে কোনোভাবেই দীঘার তুলনা করা যায় না, এটা একটা শাস্ত্রবিরোধী কাজ। আর এই সমস্ত বক্তব্যের মাঝেই এবার পুরীর মহারাজার পক্ষ থেকে যে মন্তব্য এলো, তাতে রথযাত্রাকে দীঘায় চরম সাফল্যের রূপ দিতে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করলেও, তার সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত ফ্লপ হওয়ার মুখে বলেই মনে করছেন একাংশ। কিন্তু কি ঘটনা ঘটেছে?
এদিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে যে মাতামাতি হচ্ছে, তাকে শাস্ত্র বিরুদ্ধ বলে দাবি করলেন পুরীর মহারাজা গজপতি দিব্যসিংহ দেব। এদিন তিনি বলেন, “ভগবান পরমাত্মা রূপে কিভাবে কখন আবির্ভাব হলেন, তা পুরীই জানে। দীঘাতে তো জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব হয়নি। দারুব্রহ্মরূপে জগন্নাথের আবির্ভাব হয়েছিল শ্রীক্ষেত্র পুরুষোত্তম ক্ষেত্র পুরীতে। তাই এই স্থানকে জগন্নাথ ধামের আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু আমি আশ্চর্য হচ্ছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি দীঘার ঘটনায়। বিশ্বজুড়েই জগন্নাথ দেবের একাধিক মন্দির তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেউই জগন্নাথ ধাম এই আখ্যা দেয়নি। দীঘায় এত সুন্দর ও সুবৃহৎ মন্দির তৈরি হয়েছে, এটা খুব ভালো। কিন্তু যে কাজ ওখানে হয়েছে, তা শাস্ত্র ও পরম্পরার বিরোধী।”
আর পুরীর মহারাজার এই মন্তব্যের পরেই প্রশ্ন উঠছে যে, প্রথম থেকেই তো সনাতনী সংস্কৃতির যারা মানুষ, তারা দীঘার এই জগন্নাথ দেবের মন্দির নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেখানে যে পদ্ধতিতে ভগবানকে স্থাপন করা হয়েছে, তা নিয়েও অনেক বিতর্ক শুরু হয়েছে। জগন্নাথ দেব বিভিন্ন জায়গায় আছেন। কিন্তু পুরীর মন্দিরকে একমাত্র জগন্নাথ ধাম বলে আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই “ধাম” শব্দ ব্যবহার করে যেভাবে দীঘাতেও জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপনের মধ্যে দিয়ে তা উল্লেখ করা হয়েছে, তা প্রথম থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। শাস্ত্রকে অমান্য করে এবং ক্রমাগত পুরীর সঙ্গে তুলনা করার জন্য এবং প্রচারের আলোয় আসার জন্য যে বা যারা এই কাজ করছেন, তারা হিন্দুদের শাস্ত্র এবং পরম্পরাকে অপমান করছেন বলে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। আর এবার রথযাত্রার আগেই যখন মুখ্যমন্ত্রী দীঘাতে গিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন, পরিকল্পনা করছেন, ঠিক তখনই পুরীর মহারাজার পক্ষ থেকে দীঘার সেই জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে তাকে যেভাবে শাস্ত্র এবং পরম্পরা বিরোধী বলে আখ্যা দেওয়া হলো, তাতে কিন্তু বড়সড় ধাক্কা খেলেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই মনে করছেন একাংশ।
বিরোধীদের দাবি, পুরীর মহারাজা গজপতি দিব্যসিংহ ঠিক কথাই বলেছেন। শাস্ত্রকে অমান্য করে হিন্দু সনাতনীদের সংস্কৃতিকে অপমান করে দীঘায় এই জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করা হয়েছে। কোনো রকম নিয়ম সেখানে মানা হয়নি। শুধুমাত্র পুরীর মন্দিরের পাল্টা দীঘার মন্দির তৈরি করার চেষ্টা করেছে রাজ্য সরকার। হিন্দু ভোট চলে যাচ্ছে, সেই কারণে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এইরকম একটি বিষয়কে সামনে এনেই জগন্নাথ দেবকে ব্যবহার করে শাস্ত্র বিরোধী কাজ করেছেন। আর সেটা সকলেই ধরতে পেরেছেন। তাই এবার রথযাত্রা নিয়ে তিনি পুরীর পাল্টা দীঘাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করলেও তার মুখোশ খুলে দিলেন পুরীর মহারাজা গজপতি দিব্যসিংহ। যার ফলে এটা বলাই যায় যে, পুরীর রথযাত্রার পাল্টা দীঘায় রথযাত্রা নিয়ে মাতামাতি করতেই একটা বড় ধাক্কা খেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাকে স্বাগত জানাচ্ছে বিরোধীরাও।