প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে গিয়েছে এক চূড়ান্ত অমানবিক এবং নৃশংস ঘটনা। কালীগঞ্জের বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করার পর যেভাবে শাসক দলের বিরুদ্ধে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে এবং তার ফলে ৯ বছরের বালিকা তামান্না খাতুনের মৃত্যু হয়েছে, তাতে ফুসে উঠছে সেই এলাকা, সেই পরিবার এবং গোটা রাজ্য। সকলের একটাই প্রশ্ন যে, সেই ছোট্ট বালিকা তো কোনো রাজনীতি বোঝে না। শুধুমাত্র তার পরিবার বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত বলেই কি সেই বালিকাকে এই করুন আর্তনাদের স্বীকার হতে হলো? প্রাণ চলে গেল তার! ইতিমধ্যেই কোলের মেয়েকে হারানোর কারনে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। আর তার মধ্যেই ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সেই বাড়িতে পৌঁছে নিহত বালিকার মায়ের হাতে কিছু অর্থ তুলে দেওয়ার সাথে সাথেই তা যেভাবে প্রত্যাখ্যান করে চেঁচিয়ে উঠলো সেই পরিবার, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, এই রাজ্য জুড়ে যে ট্রেন্ড শুরু করেছিলেন শাসক দলের নেতারা যে, কারও কিছু হলেই সেখানে টাকা দিয়ে তাদের সান্ত্বনা দেওয়া, সেই ট্রেন্ড কিন্তু এবার ভাঙতে চলেছে।

কি ঘটনা ঘটেছে? এদিন কালীগঞ্জে নিহত ৯ বছরের বালিকা তামান্না খাতুনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। যেখানে নিহত বালিকার মায়ের সঙ্গে গোটা ঘটনার বিবরণ শোনার পর তাকে কিছু অর্থ সাহায্য করার জন্য উদ্যোগী হন তিনি। আর এর সাথে সাথেই তৃণমূল বিধায়কের মুখের ওপরেই নিহত নাবালিকার মা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, এই সমস্ত টাকা তিনি নেবেন না। আর এই সমস্ত টাকা দিতে আসার অর্থ কি, তা নিয়েও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি। এদিকে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সাথে সাথেই তিনি রাজনীতি নয়, একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সাহায্য করতে এসেছেন বলে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার মরিয়া চেষ্টা শুরু করে দেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর।

বিরোধীরা বলছেন, এই রাজ্যে একটা ট্রেন্ড তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে, বিষমদে মৃত্যু থেকে শুরু করে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু, যে কোনো মৃত্যুতেই সামান্য কিছু টাকা দিয়ে সেই পরিবারের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। তবে এবার মানুষ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। শাসকের সন্ত্রাসের জন্য, শাসক দলের কিছু দুষ্কৃতির জন্য আজকে নয় বছরের নাবালিকা মেয়ের প্রাণ চলে গেল। কিন্তু তারপরেও তৃণমূলের অনুশোচনা বলতে কিছু নেই। শাসক দলের বিধায়ক কিছু টাকা দিয়ে ভেবেছিলেন, সেই পরিবারের মুখ বন্ধ করবেন। কিন্তু তেমনটা আর হচ্ছে না। এই রাজ্যে অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে যার মেয়ে চলে গিয়েছে, তিনি বুঝছেন কি যন্ত্রনা! তাই তিনি সেই যন্ত্রনা নিয়ে যত দিন না মূল দুষ্কৃতীদের শাস্তি হয় এবং যতদিন না এই সরকারকে উৎখাত করা যায়, ততদিন সেই সন্তানহারা মা তার লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেই দাবি করছেন বিরোধীরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল ভেবেছিল, সবকিছু তাদের, তাই তারা যা খুশি তাই করতে পারে। আইন হাতে তুলে নিয়ে তাদের নেতারা দুষ্কর্ম করবে, আর সাধারন মানুষ চুপচাপ থাকবে। কিন্তু কালীগঞ্জের ঘটনা সকলের চোখ খুলে দিয়েছে। শুধুমাত্র বিরোধীয়দলের কর্মী সেই পরিবার, যার কারণে শাসক দলের উল্লাস এবং বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমার কারনে যেভাবে এক নাবালিকা প্রাণ হারালেন, তাতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে পরিস্থিতিকে নিজেদের মধ্যে রাখতে কিছু টাকা দিয়ে যাতে সবকিছু কন্ট্রোল করা যায় এবং সবাই ভাতাজীবি, এমনটাই ভেবেছিলেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু যার মেয়ে চলে গেছে, তিনি বুঝছেন যন্ত্রণাটা কি! তাই তৃণমূল বিধায়ক এসে নিহত নাবালিকার পরিবারের হাতে কিছু টাকা তুলে দিতে চাইলেও, যেভাবে সেই নাবালিকার পরিবার এবং তার মা প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন, তাতে যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকে, তাহলে তৃণমূল এবার থেকে আর এই রকম ঘটনা যেমন ঘটাবে না, ঠিক তেমনই এমন ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে আর টাকা দিয়ে কারওর মুখ বন্ধ করার মত দুঃসাহস এবং অমানবিক চেষ্টা করবে না বলেই মত রাজনৈতিক সমালোচকদের।