প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – ফুরফুরা শরিফ ও তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা জল্পনায় এবার পরিষ্কার বার্তা দিল রাজ্যের শাসকদল। প্রভাবশালী ধর্মীয় কেন্দ্র ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা কাশেম সিদ্দিকীকে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হিসাবে নিয়োগ করেছে দল। সোমবার এক প্রেস বিবৃতিতে ঘাসফুল শিবির এই ঘোষণা করে। একইসঙ্গে, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শঙ্কর মালাকারকে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি পদে বসানো হয়েছে। এই দুই ঘোষণাই আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী বর্তমানে ভাঙড়ের বিধায়ক। তিনি তৃণমূলের বিরোধী শক্তি হিসেবে আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (ISF)-এর প্রার্থী হয়ে ২০২১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। সেই সময় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচন লড়েছিল ISF। এর পর থেকেই ফুরফুরা শরিফের একাংশের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্ব দিনে দিনে রাজনীতির মঞ্চে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নওশাদ ও আব্বাস দু’জনেই রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিকবার সরব হয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুরফুরা সফর নতুন জল্পনার জন্ম দেয়। তিনি সেখানে ইফতার সভায় যোগ দেন। যদিও সেদিন উপস্থিত ছিলেন না নওশাদ বা আব্বাস সিদ্দিকী, যাঁরা এখন ISF-এর মুখ। কিন্তু মমতার পাশে তখনই দেখা যায় কাশেম সিদ্দিকীকে। শুধু ফুরফুরাতেই নয়, পরদিন কলকাতার পার্ক সার্কাসের ইফতারেও মমতার ঘনিষ্ঠ সারিতে ছিলেন কাশেম। তখন থেকেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে—ফুরফুরার প্রতিনিধিত্ব এবার কি কাশেম সিদ্দিকীর হাত ধরে তৃণমূলের ঘরে ফিরছে?

তৃণমূল নেতৃত্বের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত সেই প্রশ্নেরই একপ্রকার জবাব বলে ধরা হচ্ছে। কাশেম সিদ্দিকীকে রাজ্য সম্পাদক করে তৃণমূল কংগ্রেস একদিকে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে নতুন করে আস্থা ফেরাতে চাইছে, অন্যদিকে ISF-এর তীব্র বিরোধিতার মোকাবিলায় এক ধর্মীয় পাল্টা মুখ তুলে ধরছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের সুযোগ নিচ্ছেন এবং ফুরফুরা শরিফের একটি অংশকে পাশে টেনে এনে বড় রাজনৈতিক চাল চালছেন। কাশেম সিদ্দিকীর মতো পরিচিত ধর্মীয় মুখকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে তৃণমূল বোঝাতে চাইছে—ফুরফুরা শরিফ এখনও তাদের সঙ্গেই আছে।

সবমিলিয়ে, কাশেম সিদ্দিকীকে ঘিরে তৃণমূলের এই নতুন রাজনৈতিক পরিকল্পনা রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দানে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার, এই পদক্ষেপ আদতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে।