প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের আগে থেকেই রাজ্যের বিরোধী দল প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল, এটা কোনো মন্দির নয়। এটা একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আজও নিজেদের বক্তব্যে অনড় রয়েছে বিরোধী দল বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সামনেই রথযাত্রা। আর তার আগে পুরীর মত দীঘাতেও জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা মহাসমারোহে পালন করতে ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বিলি নিয়েও নানা মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভগবানের প্রসাদ নিয়ে অনাচার শুরু হয়েছে বলেই দাবি করছে বিজেপি। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এবার হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগ নিয়ে খেলার অধিকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে দিয়েছে, তা নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
ইতিমধ্যেই রেশন দোকানের মাধ্যমে ঘরে ঘরে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্যারা এবং গজা সহ জগন্নাথের ছবি প্যাকেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে প্রসাদ হিসেবে যে মিষ্টি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, সেই মিষ্টি স্থানীয় দোকান থেকে তৈরি হচ্ছে। এমনকি অনেক মুসলিম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের দোকান থেকেও সেই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। আর সেটা হালাল করা মিষ্টি। এদিন তেমনটাই অভিযোগ করলেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে উনি কম্পিটিশন করতেই পারেন। কিন্তু হিন্দুদের ভাবাবেগ নিয়ে খেলার অধিকার ওনাকে কে দিলো? দাদাভাই না ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডার, তার মালিক অমুক শেখ। আর একটা মিষ্টির দোকান,তার মালিক মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং তিনি গর্ব করে বলছেন যে, এখানে হালাল মিষ্টি পাওয়া যায়। সেই হালাল মিষ্টি কিভাবে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ হয়? এই অধিকার মুখ্যমন্ত্রীকে কে দিয়েছে?”
আর সুকান্তবাবুর এই বক্তব্যের পরেই প্রশ্ন উঠছে যে, সত্যিই তো তাই। এইরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে তো এটা হিন্দুদের ভাবাবেগে চরম আঘাত। মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেও একজন হিন্দু। তিনি তো প্রত্যেকটি হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠানে গিয়ে মাঝেমধ্যেই মন্ত্র উচ্চারণ করেন। তাহলে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বলে সাধারণ মানুষের কাছে যে মিষ্টি প্যারা এবং গজা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তা কি আদৌ প্রসাদ? নাকি তা স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকে, যেখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা রয়েছেন, তাদের কাছ থেকে তৈরি হয়ে আসছে? এতে কি হিন্দু সম্প্রদায় আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে না? যদি এটা মুসলিমদের সঙ্গে হত, তাহলে কি তারা এটা মেনে নিতে পারতেন এবং এই রাজ্যের সরকার সেই কাজ করতে পারত? সুকান্তবাবুর বক্তব্যের পর কিন্তু এই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এমনিতেই তো জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিতরণ নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা যে প্রশ্ন তৈরি করছে, তাতে রাজ্যবাসীর মধ্যেও একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, সত্যিই কি এটা জগন্নাথের প্রসাদ! নাকি স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকে কিছু একটা তৈরি করে দিয়ে তা মানুষের কাছে বিলি করে হিন্দুদের মন পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে? তবে এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই সুকান্তবাবু যেভাবে এক মুসলিম ধর্মাবলম্বীর কথা তুলে ধরে হালাল মিষ্টি তৈরি হচ্ছে বলে ভয়ংকর তথ্য সামনে আনলেন, তাতে কিন্তু এই রাজ্যের সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করছেন এবং তাদের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলার অধিকার কে দিয়েছে? সেই প্রশ্ন ক্রমশ উর্ধ্বমুখী হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।