প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- অনেকেই বলেন, তৃণমূল দলে এখন পিসি এবং ভাইপোর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। কার হাতে দলের ক্ষমতা যাবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে টানাপোড়েন। আর এই পরিস্থিতিতে নিজের সংসদীয় এলাকায় নিঃশব্দ বিপ্লব নামক একটি বই প্রকাশ করতে গিয়ে সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথা বললেন, তাতে শুধু তিনি বিজেপিকে যে চাপে ফেললেন, তা কিন্তু নয়। এই পশ্চিমবঙ্গের বুকে যে বিষয় নিয়ে সব থেকে বেশি আন্দোলন হয়েছিল, সেই আরজিকর ইস্যু টেনে এনে নিজের দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকেও চাপের মুখে ফেলে দিলেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কি বলেছেন তিনি?
এদিন নিজের সংসদীয় এলাকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পহেলগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে, “দেশের ভেতরে ঢুকে চারজন জঙ্গি ২৬ জনকে গুলি করে মেরে দিল। আর তারপর তারা কোথায় গেল, কেউ তা জানে না। তাহলে বিএসএফের বর্ডার সামলানোর দায়িত্ব। তাহলে যাদের দায়িত্ব, তারা কেন পদত্যাগ করবে না?” আর সেই কথা বলতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, “আরজিকরের ঘটনায় যদি আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন, তাহলে পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় ব্যর্থতা নিয়ে কেন অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করা হবে না?” আর এখানেই অনেকে বলছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি আরজিকরের প্রসঙ্গ টেনে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন? কারণ তৃণমূলের কাছে সেই আরজিকরের সময়কার আন্দোলন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সেই পুরনো বিষয়কে সামনে এনে কি খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তৃণমূলের সেনাপতি?
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের মধ্যে এখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কিন্তু সেই কথা বলতে গিয়ে তিনি যেভাবে আরজিকরের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন এবং সেখানেই থেমে থাকলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলে কেন অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করা হবে না? এত বড় কথা বললেন, তখন বুঝতে হবে, তিনি কিন্তু দল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো অস্বস্তিকেই সামনে নিয়ে চলে এলেন। বিজেপিকে আক্রমণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই ঠিক ছিল। কিন্তু পুরনো বিষয়কে এনে আরজিকরের মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে সেই সময় আওয়াজ উঠেছিল, সেই বিষয় সামনে আনলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, তৃণমূল দলে অশান্তিটা ভালো পর্যায়ে লেগেছে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, পহেলগাঁওয়ে কি ঘটনা ঘটেছে, তা সকলেই জানেন। তারপর পাকিস্তানকে কি করে জবাব দিয়েছে ভারত, সেটাও সকলের জানা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য করিয়ে বিদেশের মাটিতে গিয়ে তিনি ভারতের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ভারত কিভাবে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিয়েছে, তা তুলে ধরেছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র বিজেপিকে আক্রমণ করতে হবে জন্যই হয়ত অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করতেই পারেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তিনি কি নিজের দলনেত্রীরই অস্বস্তি বাড়িয়ে দিলেন না? যে আরজিকর ইস্যু তৃণমূলকে এত চাপে ফেলে দিয়েছিল, সেই সময়কার কথা তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলে কেন পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করা হবে না, এই কথা বলে অভিষেকবাবু নিজের দল তো বটেই বরঞ্চ নিজের নেত্রীকেও চরম গাড্ডার মুখে ফেলে দিলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।