প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- সম্প্রতি তৃণমূলের পক্ষ থেকে সার্কুলার জারি করে জেলায় জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, কেউ বাড়ি গিয়ে কারও কাছ থেকে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনো তথ্য চাইলে, তাহলে তা দেবেন না। এক্ষেত্রে যদি কারও বিষয়ে কোনো সন্দেহ হয়, তাহলে থানায় স্থানীয় নেতৃত্বকে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। আর এবার বেসরকারি সংস্থার কর্মী হিসেবে জনমত সমীক্ষা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ভুল চালের জন্যই গ্রেপ্তার করা হলো মোট ৫ জন ব্যক্তিকে। বিরোধীদের দাবি, এরকম করেই সমাজের সমস্ত স্তম্ভের অধিকার হরণ করছে তৃণমূল।
জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার হরিয়ানার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন ৫ জন ব্যক্তি। যেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তারা আধার এবং ভোটার কার্ড সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য নেন। আর এই ঘটনাতেই দলের সার্কুলার মনে পড়ে সন্দেহ হয় এক তৃণমূল নেতার। সাথে সাথেই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা টুটুন দাস থানায় অভিযোগ জানান। যার পরেই সেই বেসরকারি সংস্থার ৫ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
আর এখানেই প্রশ্ন, সত্যিই কি তারা ভোটার এবং আধার কার্ড যে অভিযোগ তৃণমূল করছে, এবং তার জন্য জেলায় জেলায় সার্কুলার পাঠিয়েছে, সেই রকম কোনো তথ্য গোপনে নিতে এসেছিলেন? নাকি তারা তাদের সংস্থার জন্য যে রুটিন মাফিক কাজ, সেই কাজ করছিলেন? এদিন এই প্রসঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সেই সংস্থার কর্মী সুদীপ মন্ডল বলেন, “আমরা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী হিসেবে জনমত সমীক্ষা করতে বাঁকুড়ায় এসেছিলাম। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে সমীক্ষার অনুমতি চাইতে গেলে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে। পুলিশ কেন আমাদের গ্রেফতার করেছে, তা আমরা জানি না।”
অন্যদিকে এদিন এই ব্যাপারে তৃণমূল নেতা টুটুন দাস বলেন, “পাঁচজন বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার ও আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করছিল। সন্দেহ হওয়ায় আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছি। এদিকে যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কোনো সংস্থার হদিস পাওয়া যায়নি বলেই জানিয়ে দিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি। ইতিমধ্যেই সেই ৫ জন ব্যক্তিকে আদালতে তোলা হয়েছিল। আর তারপরেই বিচারক তাদের দুই দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে গোটা ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিজেপি এজেন্সিকে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে। যদিও বা তৃণমূলের সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। তাদের বক্তব্য, বিজেপি এই সমীক্ষক দল পাঠায়নি। যারা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করছেন, তাদের এইভাবে গ্রেফতার করে রুজিরুটির সর্বনাশ করছে তৃনমূল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূল ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় একটা সার্কুলার পাঠিয়ে দিয়েছে যে, ভোটার তালিকা এবং আধার তালিকার তথ্য কাউকে দেবেন না। যদি কেউ এই তথ্য সংগ্রহ করতে আসে, তাহলে প্রয়োজনে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। আর সেই মতই তৃণমূল নেতারা এদিন থানায় অভিযোগ দায়ের করার সাথেই পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছে। যদি যে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ হয়েছে, তারা যদি সত্যিই অন্যায় করে থাকে, তাদের যদি কোনো গোপন উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে কারওর কিছু বলার নেই। পুলিশ যা করেছে, ঠিক করেছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তো দেখা যায়, নিজেদের সংস্থার কাজের জন্য নিজেদের পেট চালানোর জন্য অনেক বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি এসে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যান, তাহলে সেই রকম যদি কোনো ঘটনা হয়, তখন কি বলবে তৃণমূল নেতৃত্ব? যদি এই ঘটনার পেছনে প্রমাণ হয়ে যায় যে, এই বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়, নিজেদের কাজের জন্যই এসেছিলেন, তখন তাদেরকে যেভাবে হেনস্থা করা হলো, তা নিয়ে মুখ খুলতে পারবে তো তৃণমূল? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।