প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- এতদিন অনেক দাপট দেখিয়েছেন। বীরভূমের বাঘ বলে তাকে সম্বোধন করেছেন তার দলের নেতারা। তিনি নাকি এমন বাঘ যে, তার দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত বীরভূমে। কিন্তু সেই অনুব্রত মণ্ডল এখন ভেজা বিড়ালে পরিণত হয়েছেন। কটাক্ষ করে তেমনটাই বলছে বিরোধীরা। কারণ তার অডিও ক্লিপ যেভাবে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে, তারপর তার সেই দাপট আর লক্ষ্য করতে পারছে না কেউ। তবে পুলিশ একজন তৃণমূল নেতার মন্তব্যের পরেও কি করে তাকে ছেড়ে রাখতে পারে? কি করে তারা এতটা দল দাস হতে পারে! সেই প্রশ্ন রাজ্যবাসীর মনের মধ্যে রয়েছে। তবে পুলিশ অনুব্রত মণ্ডলকে ছেড়ে দিলেও বিরোধীরা কিন্তু এবার ছেড়ে কথা বলবে না। তাই যেভাবে একজন পুলিশ কর্তাকে ফোন করে তার মা, বউয়ের সম্পর্কে কটুক্তি করেছেন এই তৃণমূল নেতা, এবার তার বিরুদ্ধে আজ সেই কেষ্ট মন্ডলের দুয়ারের একদম কাছে গিয়েই বিরাট পদক্ষেপ নিতে চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

 

ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যের মানুষ জেনে গিয়েছেন যে, আজ শুভেন্দু অধিকারীর কি কর্মসূচি রয়েছে! আজ তিনি অনুব্রত মণ্ডল একজন পুলিশ কর্তাকে যেভাবে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন এবং যেভাবে তার মা, বউ তুলে গালিগালাজ করেছেন, তার বিরুদ্ধে বোলপুরে একটি কর্মসূচি নিয়েছেন। যেখানে টুরিস্ট লজের মোড় থেকে নারী সম্মান যাত্রা করবে বিজেপি। আর সেখানেই উপস্থিত থাকবেন শুভেন্দু অধিকারী। ইতিমধ্যেই বারবার করে এই কর্মসূচি সম্পর্কে বলতে গিয়ে শুভেন্দুবাবু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, বোলপুরের মানুষ এবার দেখবেন প্রতিবাদ কাকে বলে! গোটা বোলপুরকে অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিজেপির এই প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর সেই প্রতিবাদ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই যখন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তখন রীতিমত স্নায়ুর চাপ বাড়ছে অনুব্রত মণ্ডল এবং তার দলের মধ্যে বলেই মনে করছেন একাংশ।

 

বিজেপির দাবি, পুলিশ নিজেদের অপমান সহ্য করেও এই তৃণমূল নেতাকে এতদিন ছাড় দিয়ে রেখেছে। কিন্তু বীরভূমের মানুষ, বোলপুরের মানুষ রাজ্যের সাধারণ মানুষ অনুব্রত মণ্ডল এবং তৃণমূল নেতাদের এই অত্যাচার আর মুখ বুজে মানতে রাজি নয়। তাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের সুর চওড়া করতেই ময়দানে নামছে বিজেপি। যিনি প্রতিমুহূর্তে গুন্ডা দিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতেন, যদি ক্ষমতা থাকে, তাহলে আজকে সেই অনুব্রত মণ্ডল বিজেপির এই কর্মসূচি আটকে দেখান। বাড়ি থেকে বের হয়ে বিজেপির মুখোমুখি হয়ে দেখান। কিন্তু সেই ক্ষমতা তার নেই। কারণ তিনি যে ভাষায় একজন পুলিশকর্তাকে আক্রমণ করেছেন, তার মা, বউকে গালিগালাজ করেছেন, তাতে গোটা বাংলার নারী সমাজ অপমানিত হয়েছে। তাই এর খেসারত অনুব্রত মণ্ডল এবং তার দলকে দিতে হবে। আগামী দিনে মহিলাদের অপমানের এই প্রতিবাদে গোটা রাজ্য থেকে তৃণমূল উৎখাত হয়ে যাবে বলেই দাবি করছে পদ্ম শিবির।

 

পর্যবেক্ষকদের মতে, একসময় এই বীরভূমে বিজেপি দাগ কাটার সাহস পেত না। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে এই লাগাতার অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিই বিজেপিকে বীরভূমে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। পুলিশ ভেবেছিল যে, তারা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কানামাছি খেলবে, আর গোটা রাজ্যের মানুষ ভেবে নেবে যে, পুলিশ অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করেছে, ব্যাস, এটাতেই পুলিশের নিরপেক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষ এত বোকা নয়। তারা পুলিশের চালাকি ধরে ফেলেছে। তাই এবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কি করে তৃণমূল নেতাদের জবাব দিতে হয়, কি করে অপমানের প্রতিশোধ নিতে হয়, তা দেখিয়ে দেবে বিজেপি। পুলিশের ঘরের মা বউয়েরা তৃণমূল নেতাদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হলেও, পুলিশের হয়ত বলার কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির কর্তব্য, বিরোধী দলনেতার কর্তব্য, যেখানে যারাই আক্রান্ত হবেন শাসকের দ্বারা, সেখানেই তিনি তাদের পাশে দাঁড়াবেন। তাই বীরভূমের বাঘ বলে পরিচিত যে নেতা এতদিন তান্ডব চালিয়েছেন, তার মুখোশ খুলে দিতে তার দুয়ারের একদম কাছেই বিজেপি এমন এক কর্মসূচি নিতে চলেছে, যার ফলে জেরবার হয়ে উঠবে তৃণমূল কংগ্রেসও বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।